কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ির আকাশ। শিক্ষার্থীদের কলরব যেখানে বিরাজ করতো, সেখানে এখন শুধুই আর্তনাদ। এ যেন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।
সোমবার বেলা একটার পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে দগ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তবে নিহতের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারে অংশ নেওয়া অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য অনুযায়ী, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই শ্রেণিকক্ষগুলোতে লাশের স্তূপ দেখা গেছে। আনুমানিক দেড়শ’র বেশি সেখানেই মারা গেছে বলে তার আশঙ্কা।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, সর্বশেষ রাত সাড়ে ১০টায় একজন এবং ১২টার দিকে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিশু। এ ছাড়া বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম এবং শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী (৪৬) মারা গেছেন।
আহত ও দগ্ধ ১৭১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে ঝলসে যাওয়া শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে। এছাড়া অন্যান্য হাসপাতালেও দগ্ধদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত দেড়শ’র বেশি শিক্ষার্থীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দগ্ধদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। তবে তাৎক্ষণিকভাবে দগ্ধদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বেলা সাড়ে ৩টায় বলেন, “এখন পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক এসেছে। আমরা খুব ব্যস্ত আছি। আহতের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। দগ্ধদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
দগ্ধ ও আহতদের একটি অংশকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
হতাহতের ঘটনায় জরুরি প্রয়োজনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে ইমার্জেন্সি হটলাইন চালু করা হয়েছে। হটলাইন নম্বর- ০১৯৪৯০৪৩৬৯।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়।
বেলা দুইটার কিছু পরে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, গুরুতর আহত চারজনকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উত্তরা, টঙ্গী, পল্লবী, কুর্মিটোলা, মিরপুর, পূর্বাচল ফায়ার স্টেশনের আটটি ইউনিট উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।
এদিকে, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়া আহত-নিহতদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শোক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: