ভারতে যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া আজ, তবে কী যুদ্ধ আসন্ন

Security Drills

কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে ভারতের। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি রাজ্যকে জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে ৭ মে, অর্থাৎ বুধবার ভারতের সব রাজ্যে ‘মক ড্রিল’ বা আপৎকালীন অথবা যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া হবে।

হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বা বিমান হানা বা বন্দুকধারীদের হামলা হলে সাধারণ নাগরিকদের করণীয় কী হবে, তারই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৯৭১ সালের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রথমবার এ ধরনের মহড়ার নির্দেশ দিল।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছিলেন, “যদি যুদ্ধ বাঁধে তাহলে সামরিক বাহিনী তো থাকবেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বসে বসে দেখবে না, তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সেইসব দায়িত্বই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।”

মহড়ার জন্য কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট সচিব গোভিন্দ মোহন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন মঙ্গলবার দুপুরে।

মক ড্রিল কী?

মক ড্রিল হল একটি অনুশীলন, যেখানে আগুন, ভূমিকম্প, চিকিৎসা জরুরি অবস্থা বা সন্ত্রাসী হামলার মতো জটিল পরিস্থিতির সময় মানুষ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি কেমন প্রতিক্রিয়া দেবে, তা যাচাই করা হয়। এই ধরনের মহড়ার মাধ্যমে জরুরি পরিকল্পনা কতটা কার্যকর তা বোঝা যায় এবং কোথায় দুর্বলতা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা যায়।

কোথায় হবে এই মক ড্রিল?

সারা দেশের ২৪৪টি সিভিল ডিফেন্স ক্যাটেগরাইজড জেলাতে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ২৯৫টি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা/শহরকে চিহ্নিত করেছে যেখানে সিভিল ডিফেন্স ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

কী হতে পারে মহড়ায়?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে দেশের ২৪৪ বেসামরিক প্রতিরক্ষা জেলার শহর থেকে গ্রাম – সব এলাকাতেই বুধবার মহড়া চলবে।

বিমান হামলা হলে ঠিকমতো সাইরেন বাজিয়ে সঙ্কেত দেওয়া যাচ্ছে কি না, কন্ট্রোল রুমে কীভাবে কাজ হবে – সবই মহড়ার সময়ে খতিয়ে দেখা হবে। বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে বুধবার।

বিমান হানার সময় কী করতে হবে, সেই বিষয়ে সাধারণ প্রশিক্ষণ হবে। তাছাড়া যুদ্ধের সময় পড়ুয়ারা কী ভূমিকা নেবে, তাও শেখানো হবে। পাশাপাশি বিমান হামলার সতর্কতায় সাইরেন বাজলে কী করতে হবে, হঠাৎ যদি ব্ল্যাকআউট হয়, কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন পড়লে, কী করণীয়, তারও মহড়া দিতে বলা হয়েছে।

কেন এই মহড়া?

কাশ্মীরের হামলার পর ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া এবং পাকিস্তানের পাল্টা হুমকির মধ্যে এই মহড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ সম্প্রতি বলেন, “ভারত যেকোনও সময় হামলা চালাতে পারে এবং তার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।”

এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে সব সময় সর্বোচ্চ সিভিল ডিফেন্স প্রস্তুতি থাকা উচিত।

এই মহড়ার মাধ্যমে ভারত বোঝাতে চাইছে যে সে কোনও ধরনের “নতুন এবং জটিল হুমকি” মোকাবিলায় প্রস্তুত।

মহড়া কেন দরকার?

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন যে, এই ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়ার দুটো মূল উদ্দেশ্য আছে।

“এক তো পাকিস্তানের ওপরে একটা মানসিক চাপ তৈরি করা যে ভারতে মক ড্রিল হচ্ছে – তার মানে ভারত কোনও একটা সামরিক পদক্ষেপ হয়তো নেবে। দ্বিতীয়ত কোনও হামলা হলে সাধারণ মানুষ যাতে সতর্ক থাকতে পারেন, তাদের কর্তব্যগুলো কী, সেটা অবহিত করিয়ে দেওয়া।”

“একমাত্র ইসরায়েলে এধরনের মক ড্রিল হয় অনেক দশক ধরেই। এটা ভারতের নাগরিকদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে নিয়মিত ড্রিল হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষকেও আপৎকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে একাত্ম করিয়ে নেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে,” বলছিলেন মি. চক্রবর্তী।

তার কথায়, “কোনও যুদ্ধ হলে আমাদের সামরিক বাহিনীগুলো তো লড়বেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি চা খেতে খেতে সেই যুদ্ধের ছবি দেখবে টেলিভিশনে? তাদেরও তো কর্তব্য আছে, সতর্কতা নেওয়ার দরকার আছে। তবে তার অর্থ এটা নয় যে সব মানুষ বাড়িতে বাঙ্কার বানাবে।”

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই প্রথম দেশজুড়ে এমন অসামরিক মহড়া হতে চলেছে। ২০১৯ সালে উরি হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের সময়ও এমন নির্দেশ জারি করা হয়নি।

তার আগে কার্গিল যুদ্ধের সময়েও এমন কিছু হয়নি। অর্থাৎ ১৯৭১-এর পর ফের ২০২৫ সালে আমজনতার জন্য অসামরিক মহড়ার নির্দেশিকা জারি হল। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এবার সরাসরি যুদ্ধের পথেই হাঁটতে চলেছে ভারত?।

আরও পড়ুন