একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া গোষ্ঠীকে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা প্রদান এবং যুদ্ধাপরাধীদের নামে স্লোগান দেওয়ার বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের এমন অবস্থানের কথা জানাল দলটি।
সোমবার দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
তারা বলছে, “যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে।”
জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দলটি সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে তাদের সমমনা কয়েকটি দলকে সঙ্গে নিয়ে টানা তিন দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থী ও নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও তাদের সঙ্গে অংশ নেয়, যেমনটি দেখা গিয়েছিল গেল বছরের জুলাইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়েও।
শনিবার রাতে সরকারের তরফে তাদের দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা পেয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শুরু করলে তাতে একপক্ষকে বাধা দিতে দেখা যায়। একই কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামীর নামেও স্লোগান দেওয়া হয় দিনভর, যা নিয়ে পরবর্তীতে তীব্র সমালোচনা হয় সোশাল মিডিয়ায়।
এর জবাবে এনসিপি’র বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি—আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে আয়োজিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন দল, মত ও সাধারণ ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিলেও একটি পক্ষ সচেতনভাবে দলীয় স্লোগান এবং দেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রাম বিরোধী স্লোগান দিয়েছে। যা সাম্প্রতিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।”
দলটি দাবি করে, তাদের কোনো সদস্য এই আন্দোলনে দলীয় কিংবা ইতিহাসবিরোধী স্লোগান দেয়নি।
“তাই যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায় সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই নিতে হবে। এনসিপিকে এই বিতর্কের সঙ্গে জড়ানো সম্পূর্ণ অহেতু ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বরং এনসিপির সদস্যদের বক্তৃতা ও স্লোগানে ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪-এর মতো বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে”, ভাষ্য এনসিপি’র।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও আন্দোলনকারীরা দৃঢ়তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়—১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪-এর যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদাই এ দেশের রাজনীতির ভিত্তি হওয়া উচিত বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়।
আরও বলা হয়, “কোনো দলের অতীত আদর্শ বা অবস্থান যদি ঐক্য বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে সংশ্লিষ্ট দলেরই দায়িত্ব জনগণের সামনে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই মুজিববাদকে পরাস্ত করা সম্ভব।
অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারীদের “বাংলাদেশপন্থী” অবস্থান বজায় রেখে নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানানো হয় ওই বিৃবতিতে।
এ সংক্রান্ত আরও খবর: