কোন ট্রাম্পকার্ডে ট্রাম্পকে প্রলুব্ধ করলেন জেলেনস্কি

trump zelen

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পরিকল্পনাটি ছিল বেশ সাহসী। তিনি চেয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড় করাতে রাজি হন। এজন্য তিনি একটি লোভনীয় প্রস্তাব দেন: যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সমর্থন করলে তাদের ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হবে।

এই প্রস্তাব জেলেনস্কি সরাসরি ট্রাম্পকে দেন নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে এক বৈঠকে। শুরুটা ভালোই ছিল। যদিও কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প জেলেনস্কিকে “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিক্রয়কর্মী” বলে কটাক্ষ করেছিলেন। কারণ জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে রাজি করিয়েছিলেন—তবুও সেই বৈঠকে ট্রাম্প আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

তবে সেই সময় কেউই হয়তো বুঝতে পারেননি, ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজসম্পদ নিয়ে কতটা আগ্রহী—বা এই প্রস্তাব ভবিষ্যতে ইউক্রেনের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধের ক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠতে পারে।

শেষ পর্যন্ত বড় অগ্রগতি আসে সাত মাস পর, ভ্যাটিকানে এক জাঁকজমকপূর্ণ বৈঠকে। সেখানে জেলেনস্কি ট্রাম্পকে বলেন, তিনি এখন চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেন, “এই বৈঠকের প্রথম ফল আমরা হাতে পেয়েছি, আর সেটিই একে ঐতিহাসিক করে তুলেছে।”

তবে এই পর্যায়ে আসতে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে দুই নেতাকে। একাধিকবার আলোচনায় উত্তেজনা তৈরি হয়, হোয়াইট হাউসেও তর্ক হয়, এমনকি চুক্তি বাতিল হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছিল। সবচেয়ে নাটকীয় ছিল শেষ কয়েক ঘণ্টা।

গেল সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র এখন সরাসরি ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে অংশ নিতে পারবে। তবে এই চুক্তির গুরুত্ব শুধু অর্থনৈতিক নয়—এর রাজনৈতিক বার্তাও অনেক বড়।

এই চুক্তি ইউক্রেনের জন্য কিছুটা স্বস্তির। কারণ অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন—ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে পারেন। ট্রাম্পের জন্য এটি কৌশলগত জয়। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ইউক্রেনকে সাহায্য করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যা খরচ করেছে, তার কিছু অন্তত ফেরত আসা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে হওয়া এক নতুন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কোম্পানি ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ—যেমন লিথিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম, গ্রাফাইট, তেল ও গ্যাস—এই সব খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তি দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্ত করবে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “এই অংশীদারিত্ব শুধু অর্থনৈতিক নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাশিয়াকে দেখিয়ে দেবে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে নয়, নিজস্ব স্বার্থ নিয়েও আছে।”

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এবং বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ আসলে ইউক্রেনের বড় পরিকল্পনারই অংশ। তারা চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় থাকুক। কারণ ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে চাপ দিচ্ছেন।

চুক্তির নেপথ্যের গল্প উঠে এসেছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট অফিসের গোপন দলিল, এক ডজনের বেশি ইউক্রেনীয় কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কূটনীতিকদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শদাতা আইনজীবীদের বক্তব্য থেকে।

সবকিছু শুরু হয় গত গ্রীষ্মে। তখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার উপদেষ্টাদের বলেন, এমন একটি পরিকল্পনা করতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ইউক্রেনের পাশে থাকে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গতি আনা যায়।

এই পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয় “বিজয় পরিকল্পনা”—যেটির পাঁচটি ধাপ ছিল। এর মধ্যে ছিল নিরাপত্তা চুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা। এই পরিকল্পনায় বলা হয়, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগের দরজা খুলে দিতে হবে। এটি আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয় রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের পরামর্শ থেকে। বিনিময়ে ইউক্রেন আশা করছিল আরও বেশি সামরিক সহায়তা—যাতে তারা অন্তত নিজেদের রক্ষা করতে পারে, যদিও দখল হওয়া অঞ্চল পুনরুদ্ধার কঠিন হবে।

তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই পরিকল্পনায় খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। তিনি চিন্তিত ছিলেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র মজুদ কমে যেতে পারে বা রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া আরও ভয়াবহ হতে পারে। তারপরও হোয়াইট হাউজ একটি অর্থনৈতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায়।

জেলেনস্কি যখন নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি ট্রাম্পকে এই চুক্তির বিষয়ে বলেন। ট্রাম্প নিজেকে ‘চুক্তির মাস্টার’ বলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সাহায্যের বিনিময়ে ইউক্রেনের দামী খনিজসম্পদে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

এই আগ্রহ ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের জরিপে ট্রাম্পের এগিয়ে থাকা দেখে জেলেনস্কির দল সিদ্ধান্ত নেয়—তারা আপাতত বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ রাখবে এবং ট্রাম্প যদি ক্ষমতায় ফেরেন, সেই পরিস্থিতির সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পনা করবে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু তার বদলে চাই ইউক্রেনের দামী খনিজসম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ। 

ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের সহায়তার বিনিময়ে তিনি অন্তত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের দাবিদার। তার ভাষায়, “ওদের রেয়ার আর্থ দারুণ। আমি সেটা নিরাপদ করতে চাই।”

ইউক্রেনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এমন বড় দাবি শুনে হতবাক হন। কিন্তু তারা আরও চিন্তিত হয়ে পড়েন কারণ প্রস্তাবিত চুক্তিতে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার বিষয়ে কিছুই লেখা নেই। 

তবুও ইউক্রেন সরকার আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়—তারা চায় ভালো কিছু শর্ত আদায় করতে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে।

এর কয়েকদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট রাতের ট্রেন ধরে কিয়েভে আসেন। তার সঙ্গে আসে এক খসড়া চুক্তি। এতে বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের রেয়ার আর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের ৫০ শতাংশ মালিক হবে। কিন্তু এর বদলে কোনও নিরাপত্তা বা সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি থাকবে না।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে এই প্রস্তাবের কথা জানানো হয় বৈঠকের মাত্র এক ঘণ্টা আগে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ব্রিজেট ব্রিঙ্ক দ্রুত এই খসড়া কপি নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছান। তিনি জেলেনস্কিকে জানান, বেসেন্ট আশা করছেন চুক্তিটি তার সফরের মধ্যেই স্বাক্ষর হবে। তবে জেলেনস্কি তখনই রেগে যান।

বৈঠকের সময় এত উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মকর্তারাও ভেতরের চিৎকার শুনতে পান। বৈঠক শেষে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখনই চুক্তিতে সই করছেন না। তার ভাষায়, “এটা আজকের দিনে আমাদের পক্ষে যায় না… এটি স্বাধীন ইউক্রেনের স্বার্থেও যায় না।” তার মূল উদ্বেগ ছিল—এই চুক্তিতে কোনও নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা সহায়তার কথা বলা হয়নি।

ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় কূটনীতিকেরা তখন ভাবতে শুরু করেন, জেলেনস্কি হয়তো শুরু থেকেই খুব স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি যে তারা কী চান। 

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, “এই চুক্তি ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য বানানো হয়েছিল। কিন্তু বিস্তারিত ব্যাখ্যার অভাবে ট্রাম্প নিজেই দাম ঠিক করে নিতে পেরেছেন।”

একজন ঊর্ধ্বতন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা মনে করেন, জেলেনস্কির উচিত ছিল স্পষ্টভাবে বলা যে—এই ধরনের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতের নিরাপত্তা সহায়তার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।

বেসেন্টের সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়ায়। একটি মতামত কলামে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগণের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন আজ ভয়াবহ অবস্থায় থাকত।”

যুক্তরাষ্ট্র যখন ইউক্রেনের খনিজসম্পদ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার লাভের দাবি থেকে পিছু হটে, তখন ইউক্রেন নতুন শর্তে চুক্তি করতে রাজি হয়। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কার করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে কোনও নিরাপত্তা দেবে না—ওটা ইউরোপের দায়িত্ব।” তা সত্ত্বেও কিয়েভ আলোচনায় থাকাকালীন থেকেই আগ্রহ হারায়নি।

চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে যান। হোয়াইট হাউজে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানও আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। ট্রাম্প তাকে হাসিমুখে করমর্দন করেন এবং তার সামরিক পোশাকের প্রশংসা করেন। জেলেনস্কি সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্পকে ইউক্রেনীয় বক্সার উলেক্সান্ডার উসিকের চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট উপহার দেন।

কিন্তু বৈঠক দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, “তুমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছো।” তিনি আরও বলেন, “তোমার হাতে কোনো ট্রাম্প কার্ড নেই।” উত্তরে জেলেনস্কি শান্তভাবে বলেন, “আমি কোনো খেলা খেলছি না।” 

এর পরপরই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয় এবং জেলেনস্কিকে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিদায় জানানো হয়। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের জন্য প্রস্তুত করা লাঞ্চ শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের কর্মীদের সামনে পরিবেশন করা হয়।

মার্চের শেষদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় এবং আরও কঠিন শর্ত দেয়। একটি নতুন প্রস্তাবে বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন মিলে একটি তদারকি বোর্ড গঠন করবে, যারা ইউক্রেনের তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদের আয়ের ওপর নজরদারি করবে। বোর্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যত ভেটো ক্ষমতা থাকবে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আগের সহায়তাগুলো এই অংশীদারিত্বের আওতায় ধরা হবে। কিন্তু ভবিষ্যতের কোন সহায়তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এই প্রস্তাবকে “চাঁদাবাজি” এবং “ব্ল্যাকমেইল” বলে উল্লেখ করেন। এরপর এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি চুক্তি থেকে সরে আসছেন এবং হুঁশিয়ারি দেন, “তাহলে সে বড় সমস্যায় পড়বে।”

তবুও জেলেনস্কি নির্দেশ দেন, সমঝোতার পথ খুঁজতে হবে। এমনকি তিনি ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করতে।

চাপে থাকলেও আলোচনা বন্ধ হয়নি। ১৮ এপ্রিল একটি ভার্চুয়াল সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়, যেটা নতুন আলোচনার ভিত্তি গড়ে তোলে। এরপর রোমে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক হয় ভ্যাটিকানে। 

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি তাকে বলেছি, চুক্তিতে পৌঁছালে ভালো হবে। কারণ রাশিয়া অনেক বড় এবং অনেক শক্তিশালী।”

অবশেষে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো যায়। যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো অতীত সহায়তার বিনিময়ে বড় দাবি না করে সরে আসে। তবে এক জটিলতা দেখা দেয়—যখন ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ওয়াশিংটনে যাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ তাকে আরও দুটি নথিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেন, “সবকিছুতে স্বাক্ষর না করলে দেশে ফিরে যান।”

ইউক্রেন শুরুতে জানায়, ওই তহবিল চুক্তির জন্য সংসদের অনুমোদন দরকার। তবে তারা সমাধানের পথ খুঁজবে। শেষ পর্যন্ত কিয়েভে জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্ভিরিডেনকোকে সংসদের অনুমোদন ছাড়াই স্বাক্ষরের অনুমতি দেন। এরপর চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়।

সভার ছবি ও সেলফি ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়। স্ভিরিডেনকো যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সেলফি তোলেন এবং বলেন, “এটি আমাদের সহযোগিতার প্রতীক।”

তবে চুক্তি এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ইউক্রেনের সংসদে এটি অনুমোদিত হতে হবে, আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও বাকি। চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে শুধু চূড়ান্ত শর্ত নয়, বরং জেলেনস্কি ও ট্রাম্প কতদিন এই টানাপোড়েনের সম্পর্ক চালিয়ে নিতে পারেন, সেটার ওপর।

ইউক্রেনের বিরোধী দলীয় সাংসদ ইন্না সোভসুন বলেন, “আমরা ভালো আর খারাপের মধ্যে নয়, খারাপ আর আরও খারাপের মধ্যে বেছে নিচ্ছিলাম।” তবুও তিনি স্বীকার করেন, “যেটা আমরা পেয়েছি, সেটা শুরুর চেয়ে তুলনামূলক ভালো।”

আরও পড়ুন