ইসরায়েল গত শুক্রবার ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি ইরানিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি ইংরেজিতে বলেন, এখন সময় এসেছে “একটি দুষ্ট ও দমনমূলক শাসনের” বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর।
তিনি ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানগুলো “আপনাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত করছে।”
এখন যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক সংঘাত আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং হামলার লক্ষ্যবস্তু আরও বিস্তৃত হচ্ছে, তখন অনেকেই জানতে চাইছেন- ইসরায়েলের আসল লক্ষ্য আসলে কী।
শুধুই কি ইরানের ইসলামী শাসনের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি শেষ করা, যেমনটি নেতানিয়াহু শুক্রবার হামলার প্রথম রাতে বলেছিলেন।
নাকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নতুন একটি আলোচনার সম্ভাবনাও নস্যাৎ করে দেওয়া, যেখানে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কথা ছিল।
অথবা ইরানিদের উদ্দেশ্যে “স্বাধীনতার পথ খুলে দিচ্ছে” বলে নেতানিয়াহুর বক্তব্য কি আরও বড় কোনও উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত? হয়তো তা ইরানের ধর্মীয় শাসনের অবসান ঘটানোর একটি প্রচেষ্টা।
জেনারেল থেকে ট্রাম্প: পরামর্শক কারা
ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো ইরানকে ঘিরে তার বারবার সতর্কবার্তা। তিনি জাতিসংঘে একটি বোমার কার্টুন দেখিয়েছিলেন। গত ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সংঘাতে তিনি বারবার বলেছেন, “ইরানই সবচেয়ে বড় হুমকি।”
বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা এবং নিজ দেশের জেনারেলরাও নেতানিয়াহুকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইসরায়েলকে সবুজ সংকেত দেননি। তবে অন্তত হলুদ সংকেতের মতো কিছু হয়তো দেওয়া হয়েছিল, যা নেতানিয়াহুর জন্য যথেষ্ট ছিল।
“এখন সে খেলায় নেমে পড়েছে, পুরোপুরি,”- একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা এভাবেই নেতানিয়াহুর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পঙ্গু করে দেওয়া।
এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি জোর দিয়ে বলেন, “আমি বহুবার বলেছি, কোনও পরিস্থিতিতেই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো উচিত নয়।”
আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইনের চোখে অবৈধ।
তবে এখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কি তার উপদেষ্টা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই টার্গেট অনুসরণ করছেন?
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেন, “নেতানিয়াহু ব্যক্তিগতভাবে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ওপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো বরং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অনেকটা পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।
“দ্বিতীয়টি কঠিন হলেও কিছুটা অর্জনযোগ্য। কিন্তু প্রথম লক্ষ্যটি একটি দ্রুত ও জটিল সংঘাতে বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন।”
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের চেষ্টা
নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে পূর্বপ্রস্তুতিমূলক হামলা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির “৯০তম মিনিটে” পৌঁছে গেছে।
তার এই বক্তব্য পশ্চিমা মিত্ররাও সমর্থন করেছেন। তারা বলছেন, ইরানকে এই সীমা অতিক্রম করতে দেওয়া যাবে না। তবে নেতানিয়াহুর কৌশল নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
ইরান বারবার বলেছে, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসে বলেন, “আমরা এখনও মনে করি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।”
আইএইএ’র সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জমা করেছে। এটা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি, যেটা অস্ত্র তৈরির উপযোগী। এই ইউরেনিয়ামের পরিমাণ দিয়ে সম্ভবত নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতে পারে।
এই প্রথম গত কয়েকদিনে ইরানের বিশাল কর্মসূচির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে- নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোর্দো। আইএইএ জানায়, নাতাঞ্জে একটি ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসফাহানে চারটি “গুরুত্বপূর্ণ ভবনে” ক্ষতি হয়েছে বলেও সংস্থাটি জানায়। ইসরায়েল দাবি করেছে, এসব স্থাপনায় “গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি” হয়েছে। তবে ইরান বলছে, ক্ষতি সীমিত।
ইসরায়েল এখন বিশেষজ্ঞদের ধ্বংস করতেও মনোযোগী। এর অংশ হিসেবে তারা অন্তত নয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং একের পর এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার টার্গেট নিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও অস্ত্র কারখানা। এখন সেই তালিকা বিস্তৃত হয়ে অর্থনীতি ও তেল পরিশোধনাগারেও পৌঁছেছে।
ইরানও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। তাদেরও একটি বিস্তৃত হামলার তালিকা তৈরি হয়েছে। পাশপাশি দুই দেশেই বেসামরিক প্রাণহানি বাড়ছে।
ইরানের বিশাল পরমাণু কর্মসূচিতে চূড়ান্ত আঘাত হানতে হলে ইসরায়েলকে ফোর্দো কেন্দ্রটিতে বড় ধরনের ক্ষতি করতে হবে। এটি ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সবচেয়ে নিরাপদ স্থাপনা। ফোর্দো পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত একটি জটিল কেন্দ্র। অনেকে মনে করেন, ইরান সেখানে অস্ত্র-মানের কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুত করে রেখেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো এই কেন্দ্রে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া।
তবে এত পাথরের মধ্যে দিয়ে আঘাত হানার মতো বাংকার বিধ্বংসী বোমা ইসরায়েলের কাছে নেই। এই ধরনের বোমা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর হাতে রয়েছে। এগুলোর নাম এমওপি, অর্থাৎ ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের নির্ভুলভাবে নিয়ন্ত্রিত ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর। তবুও এত শক্তিশালী বোমা দিয়েও বহুদিন ধরে একাধিকবার হামলা চালাতে হবে বড় ধরণের ক্ষতি করার জন্য।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন গ্লোবাল এনার্জি পলিসির ইরান বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তা রিচার্ড নেফিউ বিবিসির ‘নিউজআওয়ার’ অনুষ্ঠানে বলেন, “সবকিছু করার পর নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ফোন করে হয়তো বলবেন, ‘আমি বাকি কাজ করেছি। বি-২ বোমারু বিমান ও যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী যেন হুমকিতে না পড়ে, সে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান ঘটাতে পারিনি।’”
একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, “ট্রাম্প এখনও কোন দিকে যাবেন, সেটা পরিষ্কার নয়।”
শান্তি আলোচনায় বিঘ্ন ঘটানোর পরিকল্পনা
ট্রাম্প বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। গত সপ্তাহের শুরুতে তিনি ইসরায়েলকে বলেন, ইরানকে সামরিকভাবে হুমকি দেওয়া বন্ধ করা উচিত। কারণ এটি পারমাণবিক আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তিনি আগেও বলেছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানই তিনি বেশি পছন্দ করেন।
কিন্তু ইসরায়েল হামলা চালানোর পর ট্রাম্প সেটিকে “চমৎকার” বলে প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, “এটা কেবল শুরু। আরও অনেক কিছু আসছে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, এই হামলা হয়তো ইরানকে একটি চুক্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এরপর রবিবার নিজের ট্রথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “আমাদের শিগগিরই শান্তি হবে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে! এখন অনেক ফোনকল ও বৈঠক চলছে।”
এদিকে ইরানি আলোচকরা এখন সন্দেহ করছেন, ওমানের রাজধানী মাসকাটে রবিবার যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল, তা হয়তো একটি ছলনা ছিল। এর মাধ্যমে তেহরানকে বোঝানো হয়েছিল, আসন্ন কোনও হামলার আশঙ্কা নেই। কিন্তু শুক্রবার সকালে ইসরায়েলের আক্রমণে তারা হতবাক হয়।

অনেকে মনে করছেন, এই সময় বেছে নেওয়াটাই কৌশলগত ছিল। ইউরোপীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনস’-এর মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের উপপ্রধান এলি গেরানমায়েহ বলেন, “ইসরায়েলের এই নজিরবিহীন হামলা ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য শান্তিচুক্তিকে ব্যর্থ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলছেন, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্ত করা। কিন্তু হামলার সময় ও মাত্রা দেখে বোঝা যায়, এর লক্ষ্য ছিল আলোচনাকে সম্পূর্ণভাবে বিপথগামী করা।”
এই আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা আগেই বলেছিলেন, “চুক্তি প্রায় হাতের নাগালে ছিল।” কিন্তু এর জন্য দরকার ছিল, যুক্তরাষ্ট্র যেন ইরানের ওপর সর্বোচ্চ দাবি না তোলে- বিশেষ করে পুরোপুরি পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ বন্ধ করার দাবি। ইরান এটিকে তাদের ‘রেড লাইন’ হিসেবে বিবেচনা করে।
২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে সরে আসেন, তখন নেতানিয়াহুর চাপও অন্যতম কারণ ছিল। এরপর ইরান ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা থেকে সরে আসে। এটি মূলত বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির জন্য নির্ধারিত সীমা। কিন্তু এরপর ইরান অতিরিক্ত পরিমাণে ইউরেনিয়াম মজুত করতে শুরু করে।
বর্তমান আলোচনায় ট্রাম্প ইরানকে “৬০ দিনের” সময়সীমা দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারীদের মতে, এত জটিল ইস্যুর জন্য এই সময় খুবই অপ্রতুল। ইসরায়েল হামলা চালায় ৬১তম দিনে।
চ্যাথাম হাউসের ড. সানাম ভাকিল বলেন, “ওমানের আলোচনার পথ আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন পক্ষ উত্তেজনা প্রশমনের জন্য নতুন পথ খুঁজছে।”
নেতানিয়াহুর চার্চিলিয়ান মেজাজ
তেহরানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই উত্তেজনা কেবল পারমাণবিক মজুত, সেন্ট্রিফিউজ, কিংবা সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘিরে নয়।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং ইরান’স গ্র্যান্ড স্ট্রাটেজি বইয়ের লেখক ভালি নাসর বলেন, “তারা মনে করে, ইসরায়েল চায় একবারে চূড়ান্তভাবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং সামগ্রিক শক্তিকে দুর্বল করে দিতে। এমনকি সম্ভব হলে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে সম্পূর্ণ পতনের দিকে ঠেলে দিতে।”
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে ইরানের সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
৯ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার ইরান দীর্ঘ বছর ধরে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং ব্যাপক দুর্নীতির ভোগান্তি সহ্য করে চলেছে। প্রতিবছর নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে- কখনও মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হার, কখনও কর্মসংস্থানের ঘাটতি, আবার কখনও পানি ও বিদ্যুতের সঙ্কট নিয়ে। নারীদের জীবনযাত্রায় ‘নৈতিকতা পুলিশ’-এর কঠোর হস্তক্ষেপও একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে।
২০২২ সালে নজিরবিহীন এক তরঙ্গের মতো আন্দোলন শুরু হয়। এসব আন্দোলনে জনগণ আরও বেশি স্বাধীনতা দাবি করে। কিন্তু এই দাবির জবাবে সরকার কঠোর দমন-পীড়ন চালায়।
জনগণের বর্তমান মানসিকতা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন অধ্যাপক ভালি নাসর। তিনি বলেন, “হয়তো শুরুতে, যখন চার-পাঁচজন খুব অজনপ্রিয় জেনারেল নিহত হয়েছিল, তখন কিছু মানুষ স্বস্তি অনুভব করেছিল। কিন্তু এখন তাদের নিজ নিজ অ্যাপার্টমেন্টে বোমা পড়ছে, বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছে, দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে।”
তিনি যোগ করেন, “আমি এমন কোনও পরিস্থিতি কল্পনা করতে পারি না, যেখানে ইরানিরা একজন আগ্রাসীর পক্ষ নিতে পারে, যে কিনা তাদের দেশকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে এবং সেটিকে তারা মুক্তির পথ হিসেবে ভাবতে পারে।”
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বক্তব্যে বারবার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তিনি আরও বিস্তৃত লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছেন।
শনিবার তিনি বলেন, “আয়াতুল্লাহ শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্থাপনা ও লক্ষ্যবস্তুতে আমরা হামলা চালাবো।”
রবিবার ফক্স নিউজে যখন তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হয় যে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য কি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনও বটে—তখন নেতানিয়াহু জবাবে বলেন, “তা একেবারেই হতে পারে, কারণ ইরানি শাসনব্যবস্থা খুবই দুর্বল।”
‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর ইসরায়েল বিষয়ক সংবাদদাতা ও নেতানিয়াহুর জীবনীগ্রন্থের লেখক আনশেল পেফার বলেন, “তারা ইরানি শাসকদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় জাগাতে চাইছে। এটা তাদের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হলো- ইরানি শাসনের পতন কত দিনে হবে, তা পূর্বাভাস দেওয়া বা পরিকল্পনা করা বৃথা। এটি হয়তো খুব শিগগিরই ঘটবে, আবার হয়তো ২০ বছর পর।”
তবে পেফার মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর চিন্তাধারা তার গোয়েন্দা প্রধানদের চেয়ে ভিন্ন। “আমি মনে করি, নেতানিয়াহু হয়তো সত্যিই এই বার্তায় বিশ্বাস করেন। তিনি এক ধরনের ‘চার্চিলিয়ান’ মানসিকতায় আছেন।”
রবিবার সন্ধ্যার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়- গত কয়েক দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের এক পরিকল্পনায় ভেটো দিয়েছেন। ওই পরিকল্পনা ছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করা। প্রথমে রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করে। এরপর তা আরও ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে যখন ইসরায়েলের বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তা, যেমন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান জাচি হানেগবিকে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তারা বলেন, তাদের লক্ষ্য ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়। তবে হানেগবি এক ধরনের সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, “তবে ‘এই মুহূর্তে’ কথাটি একটি সীমিত সময়ের জন্যই প্রযোজ্য।”
তথ্যসূত্র : বিবিসি