ছন্দে থাকা সাইম আইয়ুবের আরেকটি সেঞ্চুরি এবং অভিষেকে লেগ স্পিনার সুফিয়ান মুকিমের দারুণ বোলিংয়ে অনন্য এক কীর্তি ধরা দিল পাকিস্তানের হাতে। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে তৃতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬ হারাল রানে। প্রথম দল হিসেবে প্রোটিয়াদের তাদের মাঠে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান।
৪৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৯ উইকেটে ৩০৮ রান করে পাকিস্তান। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে স্বাগতিকরা পায় ৩০৮ রানের লক্ষ্য। ৪২ ওভারে ২৭১ রানে থমকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
৯৪ বলে দুই ছক্কা ও ১৩ চারে ১০১ রানের ইনিংস খেলার পথে দুটি চমৎকার জুটি উপহার দেন সাইম। পরে অফ স্পিনে ৩৪ রানে নেন ১ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এই তরুণই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তিন ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি আর দুই উইকেটে সিরিজ সেরাও তিনিই।
জোহানেসবার্গের দা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে রোববার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলেই ভাঙে পাকিস্তানের শুরুর জুটি। গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ দিয়ে শেষ হয় আব্দুল্লাহ শফিকের বিভীষিকার সিরিজ। প্রথম ওপেনার ও সব মিলিয়ে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে শূন্য রানে ফিরলেন তিনি।
এক প্রান্তে নিজের মতো করে খেলে যান সাইম। আরেক প্রান্তে বেশ সময় নেন ১০ রানে জীবন পাওয়া বাবর আজম। ৫৪ বলে পঞ্চাশে যান সাইম, নিজেকে খুঁজে ফেরা বাবরের লাগে ৬৪ বল। তাদের জুটি একশ স্পর্শ করে ১১৯ বলে।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি বাবর। ৭ চারে ৭১ বলে করেন ৫২ রান। এই প্রথম কোনো পঞ্জিকা বর্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করতে পারলেন না পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। তার বিদায়ে ভাঙে ১১৫ রানের জুটি।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতিতে দম দেন সাইম। ‘বলে-বলে’ রান করে তাকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটে তারা ৭৫ বলে গড়েন ৯৩ রানের জুটি।
৯১ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাইম। গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান কামরান গুলাম। পাঁচ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ বলে ৫৩ রান করে বিদায় নেন রিজওয়ন।
১৫ রানের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানসহ তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে তিনশর ঠিকানায় নিয়ে যান আগা সালমান ও তৈয়ব তাহির। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৭ বলে তারা গড়েন ৭৪ রানের জুটি। টি-টোয়েন্টি ঘরানার ব্যাটিংয়ে দুই ছক্কা ও তিন চারে সালমান ৩৩ বলে করেন ৪৮ রান। তৈয়ব ফেরেন ২৪ বলে ২৮ রান করে।
বড় রান তাড়ায় সপ্তম ওভারের মধ্যে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার টেম্বা বাভুমা ও টনি ডি জর্জি। থিতু হয়ে ফেরেন রাসি ফন ডার ডাসেন ও এইডেন মার্করাম। দ্রুত বিদায় নেন ডেভিড মিলার।
২১তম ওভারে ১২৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে টানেন ক্লসেন। পাল্টা আক্রমণে মার্কো ইয়ানসেনকে নিয়ে ৪৭ বলে গড়েন ৭১ রানের জুটি। সেখানে ইয়ানসেনের অবদান ১৩ রান।
২৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ক্লসেন। শেষ পর্যন্ত শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে তাহিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার খুনে ইনিংসের। ক্লসেন দুই ছক্কা ও ১২ চারে ৪৩ বলে করেন ৮১ রান।
এরপর আর তেমন একটা লড়াই করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে অভিষিক্ত কর্বিন বশের ৪৪ বলে অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংসে কমে পরাজয়ের ব্যবধান।
৫২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার সুফিয়ান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৭ ওভারে ৩০৮/৯ (সাইম ১০১, শফিক ০, বাবর ৫২, রিজওয়ান ৫৩, কামরান ০, সালমান ৪৮, তাহির ২৮, আফ্রিদি ০, নাসিম ৫*, হাসনাইন ৪, সুফিয়ান ০*; রাবাদা ১০-০-৫৬-৩, ইয়ানসেন ৯-০-৫৮-২, মাফাকা ৬-১-৫০-১, বশ ৯-০-৬৯-১, ফোরটান ১০-০-৫৬-২, মার্করাম ৩-০-১৭-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: (লক্ষ্য ৪৭ ওভারে ৩০৮) ৪২ ওভারে ২৭১ (ডি জর্জি ২৬, বাভুমা ৮, ফন ডার ডাসেন ৩৫, মার্করাম ১৯, ক্লসেন ৮১, মিলার ৩, ইয়ানসেন ২৬, বশ ৪০*, ফোরটান ৮, রাবাদা ১৪, মাফাকা ০; আফ্রিদি ৭-১-৭০-২, নাসিম ৯-০-৬৩-২, হাসনাইন ৭-১-৪১-১, সাইম ১০-১-৩৪-১, সুফিয়ান ৮-১-৫২-৪, সালমান ১-০-৭-০)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে পাকিস্তান ৩৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী পাকিস্তান
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইম আইয়ুব
ম্যান অব দা সিরিজ: সাইম আইয়ুব