ইউনূস সরকার কাদের প্রতিনিধিত্ব করে? প্রশ্ন তুললেন আনু মুহাম্মদ

Untitled design (2)

দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, বিচারহীনতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও সর্বজনকথা সম্পাদক আনু মুহাম্মদ।

‘প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে’ শিরোনামে ফেইসবুকে পোস্ট করা এক লেখায় তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যেভাবে মামলার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী সমাজকে দমন করা হচ্ছে—তা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এই অবস্থার মধ্য দিয়ে ‘আসল অপরাধীদের রক্ষা’ এবং ‘অপরাধ চেপে রাখার চর্চা’ স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলেই তিনি মনে করেন।

আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, দেশে এখন চলছে ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক পাইকারি মামলার’ মৌসুম।

এসব মামলায় ‘শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী’—অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী সমাজের প্রায় সব স্তরকে লক্ষে পরিণত করা হচ্ছে বলেই তার অভিযোগ।

তিনি বলছেন, ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামি করার মাধ্যমে যে কাউকে গ্রেপ্তার করার রাস্তা খোলা রাখা হচ্ছে।

এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের দমননীতি যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, বরং চিন্তা-ভাবনা, মতপ্রকাশ ও সৃজনশীলতার স্বাধীনতাও—তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

জুলাইয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও তদন্ত বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, “জুলাই হত্যাকাণ্ড নয়, বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়াই বড় অপরাধ?”

“সরকার যেখানে দাবি করছে—তারা ‘অপরাধীদের খুঁজছে’, সেখানে বহু বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের অতীতে মানবাধিকার আন্দোলন, প্রকৃতি রক্ষা ও স্বৈরাচার বিরোধী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ রয়েছে, তাদেরকেই এখন মামলার আসামি করা হচ্ছে।”

এই ঘটনাকে আনু মুহাম্মদ মনে করেন ‘আসল খুনীদের রক্ষা’ এবং ‘জনমতকে বিভ্রান্ত করার একটি চর্চা’।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ আন্দোলনে অগ্নিকণ্যা নামে পরিচিতি পাওয়া লাকি আক্তারের নামে মামলা হওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এই অধ্যাপকের লেখায়।

তিনি লেখেন, “শেখ হাসিনার আমলে সেই সরকারের স্বৈরাচারী শাসন, দমনপীড়ন, প্রাণপ্রকৃতি বিনাশী প্রকল্প ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমি বহু কর্মসূচিতে লাকি আক্তারকে পেয়েছি। অথচ তাকেই হত্যা মামলার আসামি করা হচ্ছে।”

লাকি আক্তার বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতির এক পরিচিত মুখ। তিনি বহুদিন ধরে গণআন্দোলন এবং নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করে আসছেন।

এসব মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, এসব মামলায় কার লাভ হচ্ছে? লাভ হচ্ছে গ্রেপ্তার ও আটক বাণিজ্যে নিয়োজিত ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত লোকজনদের, লাভ হচ্ছে আসল খুনি লুটেরাদের এবং শেষমেশ আওয়ামী লীগেরও।”

“তালিকার আরও অনেকের নাম দেখেই এই প্রশ্ন আসবে যে তাহলে কি ৭১এর যুদ্ধাপরাধী বিচার আন্দোলনে সক্রিয়তাকেই বড় অপরাধ বলে গণ্য করা হচ্ছে?”

আনু মুহাম্মদের অভিযোগ, এই দমননীতির ফলে দেশের বহু শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে গেছে। শিক্ষক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সমাজের চিন্তাশীল অংশকে আতঙ্কিত করা হচ্ছে।

এটি শুধুই ব্যক্তিগত বা আইনগত বিষয় নয়—বরং দেশের সামগ্রিক সৃজনশীলতা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের ওপর এক অন্ধকার ছায়া ফেলছে বলেই তিনি মনে করেন।

পোস্টের শেষে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, “এই সরকার কাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়?”

আরও পড়ুন