জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় বোতল ছুড়ে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্র শিবিরকে ‘সন্দেহ করছেন’ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলম।
প্রকাশ্যে শিবিরের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না দিলেও ঘটনার পর কথোপকথনের একটি অডিওতে এমনটিই বলতে শোনা যায় তাকে।
সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে ওই অডিও শেয়ার করে লিখেছেন, “গতকাল বোতল নিক্ষেপের ঘটনার পর উপস্থিত সাংবাদিক, সরকারী কর্মকর্তা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি-শিক্ষকদের সাথে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কথোপকথনের অডিও বলে দাবি করা একটি অডিও ক্লিপ।”
ওই অডিওতে মাহফুজকে বলতে শোনা যায়: “সবগুলা শিবির এখান থেকে যদি না বাইর করে আমি বলে দিলাম… সবগুলা শিবির এখান থেকে বার করতে হবে।”
এ পর্যায়ে পুরুষ কণ্ঠের একজন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলে ওঠেন: “বেযাদব, একেবারে চরম বেয়াদব।”
তখন মাহফুজ বলেন, “না, ওরা তো জড়িত আছে। এনটাইটেল ডিল করতাছে। লেট দেম কাম। দিস ইজ আনপ্রেসিডেন্টেন্ট। এটা আরকি, ইয়ে নিল আরকি। প্রতিশোধ নিল শিবিরের বিরুদ্ধে বলার কারণে এটা তো আমি বুঝি।”
অডিওতে এরপর একটু হৈ চৈ হতে শোনা যায়। সম্ভবত কেউ একজন মাহফুজের কথা শুনতে এগিয়ে এসেছিলেন।
এরপর মাহফুজ বলেন, “আমি জানি এগুলা শিবিরের ছেলেরাই আমার উপরে হামলা করছে।”
এ পর্যায়ে মাহফুজের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে কথা বলতে শোনা যায়।
মাহফুজ: “আপনাদের স্টুডেন্টরা আপনাদের জন্য ন্যায্য করে দিছে আপনাদের আজকের মাইর খাওয়া। আপনি দ্যাখেন আমি একজন মন্ত্রী। আপনাদের ছাত্ররা ন্যায্য করে দিছে আপনাদের আজকের মাইর খাওয়া।”
ভিসি: “না, না, আমরা স্যরি, আমাদের স্টুডেন্টরা করে নাই। আমরা স্যরি, খুবই স্যরি।”
মাহফুজ: “আমি বলি এটা কে মারসে? এই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সবগুলা ক্যাডারকে আপনি বের করেন, এরা মারসে।”
এরপর শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ঘটনায় জড়িতকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিতে শোনা যায়।
মাহফুজ: “যে করে নাই (এক জনে করে নাই), এটা একসাথে করসে। একসাথে কীভাবে ভুয়া স্লোগান দেওয়া হয় সেটা আমরা জানি।”
মাহফুজকে আরও বলতে শোনা যায়: “আপনারা ব্যর্থ হইসেন, আপনাদের ব্যর্থতার জন্য এর দায় আপনাদের নিতে হবে। এবং যারা ভুল করসে তাদের সবাইকে বহিষ্কার করা, যেভাবেই হোক শাস্তির ব্যবস্থা করার করেন।”

এদিকে ওই ঘটনার পর ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, “আমরা ওই যুবকের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।”
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলামও বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন৷
“ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জড়িত যুবককে পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিন দফা দাবি আদায়ে বুধবার দুপুর থেকে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘বুঝিয়ে ফেরত পাঠাতে’ গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন মাহফুজ আলম। এসময় তার বিরুদ্ধে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
রাত ১০টার পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল ছুড়ে মারে এক তরুণ, যে ভিডিও এরই মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
মাথায় আঘাত লেগেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে মাহফুজের এমআরআই করা হয়েছে বলেও জুলকারনাইন সায়ের পৃথক একটি পোস্টে দাবি করেন। একইসঙ্গে একটি ছবিও জুড়ে দেন তিনি।