আফ্রিকান তরুণদের কাছে কেন এত জনপ্রিয় ক্যাপ্টেন ট্রাওরে

burkina faso

বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাদুগুর প্লাস দ্য লা রেভলুশন চত্বরে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল বুধবার হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরের প্রতি সমর্থন জানাতে তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকমের কমান্ডার জেনারেল মাইকেল ল্যাংলির এক বক্তব্যের পরই বিক্ষোভটি শুরু হয়। তিনি এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির সামনে বলেন, বুরকিনা ফাসোর সামরিক শাসকরা দেশের সম্পদ, বিশেষ করে সোনার মজুদ জনগণের জন্য নয়, নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করছেন।

জেনারেল ল্যাংলির এই বক্তব্য শুধু বুরকিনা ফাসো নয়, পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এমনকি এই প্রতিক্রিয়া অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

বুরকিনা ফাসোর সরকার এই মন্তব্যের নিন্দা জানায়। তারা বলে, এই বক্তব্য দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

সোশাল মিডিয়ায় ক্যাপ্টেন ট্রাওরেকে সমর্থন করে শত শত বার্তা ও প্রকাশনা ছড়িয়ে পড়ে। এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে শিল্পী, কর্মী, তরুণ আফ্রিকান নেতা ও আফ্রিকান-আমেরিকানরাও জেনারেল ল্যাংলির বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান।

বুরকিনা ফাসোর সামরিক নেতৃত্ব এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে যখন উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল, ঠিক তখনই এই ঘটনাটি ঘটে।

জেনারেল ল্যাংলি ক্যাপ্টেন ট্রাওরের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন, সেটি তার শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল না করে বরং তাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। এই তরুণ সামরিক নেতার ভাবমূর্তি শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও বিস্তৃত হয়।

বুরকিনা ফাসো গত কয়েক বছর ধরে জিহাদি সহিংসতার শিকার। এই সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাওরে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখন তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে তার প্রধান অগ্রাধিকার।

তিনি ‘ভলান্টিয়ারস ফর দ্য ডিফেন্স অফ দ্য ফাদারল্যান্ড’ (ভিডিপি) নামক বাহিনীতে ব্যাপক নিয়োগ দেন। সামরিক অভিযান বাড়ান এবং সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। এই আগ্রাসী অবস্থান জনগণের একটি বড় অংশের সমর্থন আদায় করে নেয়।

তবে ট্রাওরের জনপ্রিয়তা শুধু সামরিক শাসনের প্রতি বেসামরিক জনগণের সহনশীলতার কারণে নয়। তিনি এমন কিছু মৌলিক সংস্কার করেছেন যা জনমনে ভালোবাসা জাগিয়েছে।

একজন সার্বভৌমতাবাদী ও স্পষ্টভাষী নেতা

ট্রাওরে খুব দ্রুতই এক প্রতিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান নেন। তিনি পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে ফ্রান্সের হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন।

রাশিয়া ও ইরানের মতো নতুন অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি এবং জি৫ সাহেল ও ইকোভাসের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত তার সার্বভৌমতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

ট্রাওরের এই ভূরাজনৈতিক অবস্থান সেই তরুণদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করে, যারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার খোঁজে রয়েছে।

সাহেল বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের (সিআইআরইএস) প্রেসিডেন্ট এবং সাংবাদিক ও গবেষক সেইদিক আব্বা বলেন, “প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম ট্রাওরের প্রতি তরুণদের সমর্থনের মূল কারণ তার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান ও সার্বভৌমতাবাদী ভাষ্য।”

তিনি বলেন, “প্রথমত, ট্রাওরের স্পষ্ট অবস্থান যে, তিনি বিদেশি হস্তক্ষেপ চান না। এটা তরুণ আফ্রিকানদের ভাবনার সঙ্গে গভীরভাবে মিলে যায়। এই তরুণেরা সেই পুরনো পদ্ধতিতে ক্লান্ত, যেখানে আফ্রিকান দেশগুলোকে সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হয় সিদ্ধান্ত নিতে। ট্রাওরের এই জাতীয়তাবাদী ও স্বাধীনচেতা অবস্থানই তাকে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলেছে।”

ট্রাওরে বিভিন্ন বক্তৃতায় প্রায়শই বলেন, তিনি বুরকিনা ফাসোর জনগণের জন্য “সার্বভৌমত্ব ও গর্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা” করতে চান।

২০২৫ সালের ১ এপ্রিল জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে এক ঘোষণায় তিনি বলেন, “যারা আমাদের দেশের উন্নয়নে বাধা দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ও নির্দয় হব।”

তার এই ভাষণ পশ্চিমবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নিজেদের আত্মপরিচয় খুঁজে পান এমন তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে সাড়া ফেলে।

সেইদিক আব্বা বলেন, “ট্রাওরের ভাষার ধরণ ও বক্তৃতায় কূটনৈতিক সাবধানতার অনুপস্থিতি অনেক কিছু বলে দেয়। তিনি ফ্রান্স এবং পশ্চিমপন্থী গণমাধ্যমকে সরাসরি আক্রমণ করেন। এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি একজন তরুণ নেতা ও সাহসী বক্তা।”

ওয়াশিংটন ডিসির আফ্রিকাবিষয়ক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক ড্যানিয়েল আইজেঙ্গা বলেন, ট্রাওরের জনপ্রিয়তাকে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাবের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করতে হবে।

তিনি বলেন, “২০২২ সালে ক্যাপ্টেন ট্রাওরে যখন ক্ষমতা দখল করেন, তিনি জনপ্রিয় অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভাষা ব্যবহার করে রাজনৈতিক সমর্থন গড়ে তোলেন। এই কৌশল সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হয়। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাওরের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের আমলে স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে। সাংবাদিক, সিভিল সোসাইটির নেতা, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং এমনকি বিচারপতিরাও তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

“পরিবর্তনের দাবি জানানো নাগরিকদের অপহরণ, আটক, গুম ও জোর করে মিলিশিয়া বাহিনীতে পাঠিয়ে সম্মুখযুদ্ধে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।”

নতুন সানকারা?

ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরেকে এখন পশ্চিমা প্রভাব, বিশেষ করে ফরাসি প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই অবস্থান তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

তার বিপ্লবী মনোভাব এবং আফ্রিকান ঐক্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি অনেক বুর্কিনাবেকে, বিশেষত তরুণদের আকৃষ্ট করেছে।

সেইদিক আব্বা বলেন, “আমার মতে একটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইব্রাহিম ট্রাওরের বয়স কম। তিনি স্পষ্টবাদী এবং তার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান ক্যাপ্টেন থমাস সানকারার মতোই। প্রায় ৪০ বছর আগে মৃত্যুর পরেও সানকারার জনপ্রিয়তা আজও প্রশ্নাতীত।”

বর্তমানে বুরকিনা ফাসোর সামরিক সরকার নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য প্রতীকী ও জনমুখী নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের বেতন গ্রহণ না করে সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে স্বল্প বেতন নেওয়ার সিদ্ধান্তও জনগণের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

তবে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক আফ্রিকাবিষয়ক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক ড্যানিয়েল আইজেঙ্গা বলেন, এই তুলনা আবেগনির্ভর এবং কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই উভয় ক্যাপ্টেন ৩৪ বছর বয়সে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু এখানেই তাদের তুলনা শেষ।”

সানকারা ১৯৮০-এর দশকে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তখন স্নায়ু যুদ্ধের শেষ সময় এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে মতাদর্শগত বিভাজন ছিল তীব্র।

১৯৮৩ সালে সানকারা-ঘনিষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা এক অভ্যুত্থান পরিচালনা করে তাকে ক্ষমতায় আনেন। তাকে একজন মার্কসবাদী বিপ্লবী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো, নারীর ক্ষমতায়ন, বন উজাড় রোধ ও সামাজিক বৈষম্য কমানোর মতো সংস্কার শুরু করেছিলেন।

অন্যদিকে ট্রাওরেকে শাসন করতে হচ্ছে আরও বিপজ্জনক এক পরিস্থিতিতে। তার পদচ্যুত হওয়া এখনও সম্ভাব্য বলে মনে করা হচ্ছে।

পূর্বসূরি দামিবার মতো তার অভ্যুত্থান প্রমাণ করে যে, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন দলাদলি রয়েছে। বেশিরভাগ সেনা কর্মকর্তা তার কিংবা দামিবার অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেননি।

সরকার নিজেই স্বীকার করেছে যে, ক্ষমতা দখলের পর থেকে তারা একাধিক ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছে। আর এটি প্রমাণ করে যে, ক্ষমতার পালাবদলে নানাবিধ চক্রান্ত ও অনিশ্চয়তা কাজ করেছে।

২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরে এমন কিছু সংস্কার হাতে নিয়েছেন, যা দেশের খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করবে। বিশেষ করে বুরকিনা ফাসোর প্রধান রপ্তানি পণ্য সোনা।

২০২৪ সালের অক্টোবরে তিনি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে দেওয়া কিছু খনন লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “আমরা জানি কীভাবে আমাদের সোনা উত্তোলন করতে হয়। আমি বুঝতে পারি না কেন আমরা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এই কাজ করতে দিই।”

এই সিদ্ধান্ত একটি বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ। এর উদ্দেশ্য হলো খনিজ সম্পদ থেকে দেশের জনগণ যেন সরাসরি উপকৃত হয় তা নিশ্চিত করা।

সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলারে দুটি সোনার খনি—বুংগু ও ওয়াগনিওনের পরিচালনার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এনডেভুর মাইনিং ও লিলিয়াম মাইনিং কোম্পানির মধ্যে চলমান বিরোধের অবসান ঘটায়।

তবে আফ্রিকান স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টারের ড্যানিয়েল আইজেঙ্গা বলেন, ট্রাওরের এসব পদক্ষেপ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং তার শাসনামলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে।

তিনি বলেন, “২০২২ সালে ট্রাওরে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জঙ্গি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।” বিভিন্ন হামলায় শত শত সেনা নিহত হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে দশ শতাংশের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

বুরকিনা ফাসোর হাজার হাজার বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে একটি প্রজন্ম শিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের সামরিক খাতে ব্যয় গত দুই বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়ে এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এটি সামগ্রিক সরকারি ব্যয়ের প্রায় ১৮ শতাংশ।

২০২২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এটি সরকারি ব্যয়ে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি। তাই প্রশ্ন ওঠে, প্রতিরক্ষা খাতে এই বিশাল ব্যয় বৃদ্ধি কীভাবে ঘটছে, যখন এর সঙ্গতিপূর্ণ কোনও সামরিক সাফল্য বা মানবিক উন্নতি দেখা যাচ্ছে না?

সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হতে পারে, ট্রাওরে এই অর্থ ব্যয় করছেন মূলত তার সরকারের সুরক্ষার জন্য।

পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠন

ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরে বারবার বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। বিশেষ করে তিনি কিছু সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে অভিযুক্ত করেছেন যে, তারা দেশের সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবাদকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। 

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সম্পদের কারণে ভুক্তভোগী। সাম্রাজ্যবাদীরা যেকোনো মূল্যে এই সম্পদ ফিরে পেতে চায়, যাতে তারা আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে পারে।”

২০২৪ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ইএসএ রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছি।”

এই প্রেক্ষাপটে বুরকিনা ফাসো পশ্চিমা শক্তিগুলোর পরিবর্তে রাশিয়ার মতো নতুন অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে এবং ঐতিহ্যগত মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছে।

২০২৩ সালের গোড়ার দিকে এই পরিবর্তনের শুরু ঘটে। তখন তিনি ফ্রান্সের সেনাদের দেশ থেকে চলে যেতে বলেন এবং কূটনীতিকদেরও বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এই ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠন আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বে বৈচিত্র্য আনতে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বকে জোরদার করতে চায়।

তবে বিশ্লেষক ড্যানিয়েল আইজেঙ্গার মতে, এই কূটনৈতিক কৌশলের নেতিবাচক দিক রয়েছে। তিনি বলেন, “ট্রাওরে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং অংশীদারত্বগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন।”

এই সহযোগিতাগুলোর জন্য বুরকিনা ফাসোর নাগরিকদের কোনও আর্থিক মূল্য দিতে হতো না। কিন্তু রাশিয়ার ক্ষেত্রে তা নয়। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে ট্রাওরে রুশ কোম্পানিগুলোকে খনির লাইসেন্স দিয়েছেন।

তবে এটি নিয়ে বিতর্ক আছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারত্ব আসলেই নিরাপত্তা বা মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সাহায্য করতে পারবে কি না।

২০২৪ সালে বুরকিনা ফাসো ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে। জুনে মানসিলা শহরের এক সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় শতাধিক সেনা নিহত হয়। অগাস্ট মাসে বারসালোগো শহরের বাইরে এক হামলায় শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।

ট্রাওরের ক্ষমতা গ্রহণ ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পর নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের ওপরও আক্রমণ শুরু করেছে।

অথচ ট্রাওরের এই বিপ্লবী ভাবমূর্তি, পশ্চিম-বিরোধী অবস্থান এবং দেশীয় সম্পদের ওপর সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এখনও অনেক তরুণের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। তবে বাস্তব পরিস্থিতি আরও জটিল। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা, দমননীতি ও দ্বিধান্বিত কূটনীতি।

আরও পড়ুন