পানামা খালের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে মন্তব্য করে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রশ্ন ছুড়েছেন- খালটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র ফের নেবে কি না!
তার মন্তব্য এবং খোলামেলা হুঁশিয়ারিতে নড়েচড়ে বসেছে মধ্য আমেরিকার দেশটি, দিয়েছে জবাব।
পানামার প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা কোন বিতর্কের বিষয় নয়।
প্রশ্ন হলো কেন হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র পানামা নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলো? বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত চীনের সঙ্গে পানামার অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নই যুক্তরাষ্ট্রের গাত্রদাহ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাতে ছাড় দিতে চান না যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ী প্রেসিডেন্ট।
আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ৫১ মাইল বা ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল বিশ্ব বাণিজ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুটি মহাসাগরের মধ্যে জাহাজ ভ্রমণের দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে এই মানুষের তৈরি খাল। বিশেষ করে অল্প সময়ে বেশি দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার জন্য এটি একটি ‘শর্টকাট জলপথ’।
শতাব্দী প্রাচীন এই খালটি ১৯০০ সালের শুরুর দিকে তৈরি করা হয়েছিলো এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এর রক্ষণাবেক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই ছিলো।
এরপর পর্যায়ক্রমে পানামার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য করা এক চুক্তির আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খালটি যৌথ ব্যবস্থাপনায় ছিলো। ১৯৯৯ সালে এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায় পানামা।
মাঝখানে সংস্কার কাজের জন্য কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালে খালটিকে জাহাজ চলাচলের জন্য ফের খুলে দেওয়া হয়।
দীর্ঘ সময় লাতিন আমেরিকার দেশ পানামার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। তবে ২০২৩ সাথে পানামার সাথে চীন নতুন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনাই মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবনায় ফেলেছে। কারণ, খালের সুবিধা যে দুটি দেশ সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে ওই দুটিও তারাই।
প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ এই খাল ব্যবহার করে। এসব জাহাজে মূলত গাড়ি, প্রাকৃতিক গ্যাস, সামরিক উপকরণসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয়ে থাকে।
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সামনে আনার পেছনে ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, তার দেশের জাহাজ ও অন্য নৌযান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে মধ্য আমেরিকার দেশটি।
“পানামা যে ফি আদায় করছে, তা হাস্যকর, একেবারেই অন্যায্য,” তিনি অ্যারিজোনায় এক সমাবেশে বলেন।
ট্রাম্প বলেন, “আমাদের দেশের সাথে এই প্রতারণা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য পানামার মতো মেক্সিকো ও কানাডাকে উদ্দেশ্য করেও মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন সময়।
ওই বক্তৃতায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অভিবাসী আসার জন্য দেশ দুটিকে অভিযুক্ত করেছেন। যদিও তিনি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবমকে একজন ‘চমৎকার নারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এসব মন্তব্যের জের ধরে দ্রুতই প্রতিক্রিয়া এসেছে পানামার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকেও। প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেছেন, এই খাল ও আশেপাশের এলাকার প্রতি বর্গমিটার এলাকা তার দেশের, যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
পানামার সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা কোন বিতর্কের বিষয় নয় জানিয়ে দেন তিনি।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রায় তিন শতাংশ হয় পানামা খাল ব্যবহার করে। উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে মার্কিন পূর্ব উপকূলে যে সব কনটেইনার পরিবহন করা হয়, তার ৪৬ ভাগ বহনের জন্য পানামা খাল ব্যবহার করে।
ফলে চ্যানেলটি মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে এই খাল থেকে।
বিবিসি অবলম্বনে