ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হচ্ছে রাত পোহালেই। পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং ভূরাজনীতিতে কতটুকু স্বস্তি নিয়ে আসছেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
সাম্প্রতিক দশকে বিশ্ব এগিয়েছে অনেক, ফুলে ফেঁপে ওঠা আধিপাত্যবাদ আর অর্থনীতি বদলে দিয়েছে বিশ্বমণ্ডলের চেহারা। যদিও ডনাল্ড ট্রাম্প এসবে ধার ধারছেন না, গুণছেন না অর্থনীতি পরিচালনার প্রচলিত ধারণাগুলো।
এমনও হতে পারে ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা ডনাল্ড ট্রাম্পের এই দ্বিতীয় দফা শপথ গ্রহণের মুহূর্তকে পৃথিবীর ইতিহাসের বাঁক বদলের মুহূর্ত হিসেবেও বর্ণনা করছেন।
তারা হয়তো বলবে ৩৫ বছর আগে বার্লিন প্রাচীরের পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বায়নের যুগের নতুন জন্ম ট্রাম্পের হাত ধরে। এটি হয়তো সেই সময় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যখন থেকে বিশ্বনেতারা মুক্ত বাণিজ্য এবং মানুষের মুক্ত চলাচলকে প্রধান নীতির অংশ হিসেবে দেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনও হতে পারে তারা নতুন ধারণায় এগিয়ে গিয়েছিলেন এই সময় থেকে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরোধিতা কিংবা শুল্ক আরোপ নীতি নতুন কিছু নয়। গত দুই শতাব্দীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, প্রতি ৭৫ বছর পরপর মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি সমর্থন সীমিত হয়েছে দোদুল্যমান পেন্ডুলামের মতো।
এটাও সম্পূর্ণ বাস্তব নয় যে ডনাল্ড ট্রাম্প সবকিছু বদলে দিয়েছেন। যেমন, জো বাইডেন কিন্তু তার ক্ষমতার পুরো সময়ে ট্রাম্পের রেখে যাওয়া চীন-নীতি বাতিল করেননি বা বদলাননি। বরং তিনি আরও বেশি শুল্ক এবং সুরক্ষাবাদী নীতি যোগ করেছেন।
তবুও ঐতিহাসিকরা প্রতীকী মুহূর্তগুলোর প্রতিই আকৃষ্ট হন; এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় শপথ গ্রহণ তেমনি একটি মুহূর্ত হবে হয়তো।
কারণ, মার্কিনিরা এমন একজন প্রেসিডন্টকে সমর্থন দিয়েছেন যিনি পূর্বসূরীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাকে ভিন্ন চোখে দেখেন, যা নিয়ে তিনি নিজেও গর্ব বোধ করেন।
ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্টের সময় থেকে যে উদার মার্কিন নীতির যাত্রা শুরু, যা ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, ক্ষমতা ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, সেই লক্ষ্যগুলোকেই জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো সংস্থার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা হয়েছিল।
এর ফলে বৈশ্বিক প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পুরনো ধাঁচের সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে উদার বহুপাক্ষিক মডেল অনুসরণ করে।
তবে ট্রাম্প ‘টু-পয়েন্ট-ও’ যুগ মনে হচ্ছে ওই মডেলের সমাপ্তি নির্দেশ করছে। শুল্ক নিয়ে তার কঠোর অবস্থান, গ্রিনল্যান্ড এবং পানামার ওপর তার দাবি, এবং ন্যাটো সম্পর্কে তার লেনদেনমূলক মনোভাব- এক ভিন্ন যুগ এবং ভিন্ন আমেরিকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যা দেখে মনে হচ্ছে বৈশ্বিক পরাশক্তি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং একটি ভিন্ন বিশ্ব নিয়ে আসছেন ট্রাম্প, যার পরিণতি সম্ভবত গভীর হবে বলে ধারণা।
ফক্স নিউজ অবলম্বনে