দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কেন উঠল না শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ?

Bangladesh India

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনাই যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, তা বারবার জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে ফেরাতে আইনগত প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে বলে জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। একইরকম ভাষ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও।

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সরকার দেশে যতোই আওয়াজ তুলুক না কেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রসঙ্গে তোলেননি ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ওমানের রাজধানী মাস্কটে বসেছিল ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন। সম্মেলনের ফাঁকে রোববার বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়- কী কী বিষয়ে দু’জনের কথা হয়েছে। তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছে- বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপিত বিষয়গুলো। যেমন- গঙ্গার পানি চুক্তি, সীমান্ত সমস্যা ইত্যাদি।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার বিষয়ের উল্লেখ নেই।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সরাসরি শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হয়েছে। এরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জাতিসংঘের রিপোর্ট প্রকাশের পর ভারতের উপর হাসিনাকে ফেরানোর চাপ বাড়বে।

তবে ওই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তোলেননি।

শুধু শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ উহ্য রাখাই হয়নি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নালিশের বিষয়েও ঢাকা নীরবতা পালন করেছে।

যদিও গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে আইনগত প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য একটা প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপার আছে। আমরা বারবার বলছি- শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে চাই। আশা করছি, উনাকে দ্রুত দেশে ফেরত এনে বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব হবে।”

সরকারের স্পষ্ট অবস্থানের পরও কেন পর শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা-এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তাড়াহুড়ো করে কিছু হওয়ার নয়। এই অবস্থায় ঘন ঘন তাগাদা দিলে দু’দেশের জন্যই তা অস্বস্তির কারণ হবে। তখন বিরোধ আরও হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে দ্বিপক্ষীয় অন্য বিষয়ে।

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যদি তার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে শত শত মামলা একসঙ্গে দায়ের করা হতে থাকে, তাহলে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক – যার ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।”

“যদি সব নিয়ম মেনে এবং আঁটঘাট বেঁধে ভারতের কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়, তাহলে ভারত নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করবে।”

ভারতের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল সরকার বলেন, “শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে ইউনূস সরকার শুধু মুখেই বলছে। তারা ভারতের কাছে নোট ভার্বাল দিয়েছে। কিন্তু ইচ্ছে করলে ‘লেটার রোগেটরি’ দিতে পারতো। সেটি হয়তো ‘নোট ভার্বাল‘ এর চেয়ে বেশি কার্যকরী হত।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের পর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুটি বৈঠক হয়েছে। অথচ কোনো বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরোনোর বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হয়নি। কেন তোলেনি ইউনূস সরকার ব্যাখ্যা না দিলেও এটি পরিস্কার ভারত এখন চটাতে চায় না বাংলাদেশ।”

এর আগে গতবছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক হয়েছিল।

ওই বৈঠকেও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন খোদ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।এরপর নয়াদিল্লিতে বসে শেখ হাসিনার নানা বক্তব্য-বিবৃতি ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। তাই রাশ টানতে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। কিন্তু এই অনুরোধে ভারত সাড়া দেয়নি।

গত ২৩ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। তবে সেই চিঠিরও কোনো উত্তর দেয়নি ভারত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠকে একসঙ্গে কাজ করায় গুরুত্বারোপ

আরও পড়ুন