কয়েকবছর আগে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া করোনা ভাইরাসের দগদগে স্মৃতি না মুছতেই নতুন আরেকটি ভাইরাসসের চোখ রাঙানি।
করোনাভাইরাসের মতো এইচএমপিভি নামের এই ভাইরাসটিরও উৎপত্তি চীনে। দেশটির হাসপাতালগুলোতে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ার পাশাপাশি নতুন করে নজরদারি ব্যবস্থা এবং জনউদ্বেগের কারণে শঙ্কাও বাড়ছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতেও এই ভাইরাসে তিন শিশুর আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে।
শঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ বিশেষজ্ঞরা ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণযুক্ত এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
‘হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস’ বা এইচএমপিভির চলতি শীতেই চীনের উত্তরের প্রদেশগুলোতে ছড়াতে শুরু করে। আর এতে বিশেষ করে শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
দেশটির হাসপাতালগুলোতে মাস্ক পরা মানুষজনের উপস্থিতির যেসব ছবি আর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে আসছে সেসব যেন কোভিড মহামারি শুরুর কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
অজ্ঞাত ধরনের নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীনা কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
তবে চীন নতুন এই রোগকে স্বাভাবিক শীতকালীন রোগের উপসর্গ হিসেবে দাবি করেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপডাত্র মাও নিঙ শুক্রবার বলেছেন, “শীতকালে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এমনিতেই বেড়ে যায়। মনে হচ্ছে গতবছরের তুলনায় এবার রোগটি কম গুরুতর এবং স্বল্প পরিসরে ছড়াচ্ছে।”
কী এই এইচএমপিভি?
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে এমন একটি ভাইরাস। এর লক্ষণ সাধারণ সর্দিকাশি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই।
এই ভাইরাসে আক্রান্তরা খুব একটা জটিলতায় না ভুগলেও শিশু এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের নিউমোনিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ভাইরাসটি নতুন না হলেও চীনের উত্তরাঞ্চলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এবং ১৪ বছরে কম বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ায় শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
২০০১ সালে শনাক্ত এইচএমপিভি একটি সিঙ্গেল-স্ট্র্যানডেড আরএনএ ভাইরাস তা হাঁচি-কাশির সুক্ষ্ম কনার মাধ্যমে অথবা সংক্রমিত কোনো স্থান থেকে ছড়ায়। এটি এর আগে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশে শনাক্ত হয়েছে।
কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ, শারীরিক দুর্বলতা এই ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ, যার স্থায়িত্ব হতে পারে তিন থেকে ছয় দিন। ভারাইসটির প্রতিরোধী টিকা কিংবা ওষুধ নেই। মূলত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা করা হয়।
অন্য দেশেও ছড়াবে এইচএমপিভি?
চীন ছাড়াও হংকংয়েও এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে শুরু করেছে কম্বোডিয়া, তাইওয়ানের মতো চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো।
কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে মিল রয়েছে জানিয়ে কমেবাডিয়য়ার সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এরই মধ্যে এই ভাইরাসের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
আর তাইওয়ানের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সতর্ক করেছে, শিশু, বয়স্ক এবং কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষেরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তবে ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, এতে আতঙ্কের কিছু নেই, কারণ এইচএমপিভি ‘অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতো’।
এদিকে, নাগরিক এবং পর্যটকদের আশ্বস্ত করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, “আমি আশ্বস্ত করতে পারি যে, সরকার চীনা নাগরিক এবং বিদেশিদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে যত্নশীল। চীনে ভ্রমণ করা নিরাপদ।”
সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট