এবার কি তবে জি২০ ছাড়বেন ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তারপর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল; ক্ষমতায় এসেই দুই আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই তালিকায় এবার কি যুক্ত হতে চলেছে জি২০?

আগামী ২০-২১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে চলবে জি২০-ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। এবারের জি২০ বৈঠকের থিম অবশ্য ‘সংহতি, সমতা এবং স্থায়িত্ব’ রেখেছে আফ্রিকার দক্ষিণ বিন্দুর ওই দেশ।

তবে এর আগেই সম্মেলনে যোগদান নিয়ে মুখ খোলেন নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

সমাজিক মাধ্যমে করা একটি পোস্টে তিনি জানিয়ে দেন, আসন্ন জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন না তিনি।

কিছু দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। করদাতাদের অর্থ নষ্ট করা বা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কোনও কিছুকেই সমর্থন করতে রাজি নন এই  রিপাবলিকান নেতা।

এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের নীতি নিয়েও আপত্তি রয়েছে আমেরিকার।

যদিও তাতে আমল দেয়নি কেপটাউন। তাদের যুক্তি ছিল, বর্ণবৈষম্য দূর করতেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসা অবশ্য বলেছেন, ‘‘ভূমি সংস্কার নীতির ব্যাখ্যা ওয়াশিংটনের সামনে রাখতে আমরা প্রস্তুত।’’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ইলন মাস্কের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রামফোসা। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দেয় তার অফিস। সেখানে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ভুল বোঝানো’ হচ্ছে।

যদিও তাতে ভুল ভাঙেনি যুক্তরাষ্ট্রের। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে ওয়াশিংটন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ভূমি সংস্কারের কথা বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও জি২০ সম্মেলন বয়কট আসলে একটি বাহানা। এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণ। বন্ধু রাষ্ট্র ইসরাইলের পাশে দাঁড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে দেড় বছর ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ইহুদি সৈন্যদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠেছে। এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের শরণাপন্ন হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এর কয়েক দিনের পরই আইসিসির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উপর ছিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রত্যাহার করে নেন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এর কয়েক মাসের মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। পুতিনের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের হয়। এর নেপথ্যে ছিল আমেরিকা। কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংস্থাটি একই রকমের পদক্ষেপ করতে গেলে বেঁকে বসে ওয়াশিংটন।

এ বছরের নভেম্বরে জি২০-ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনের আয়োজন করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের ধারণা ওই বৈঠক বয়কট করবেন ট্রাম্প। সেই কারণেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না রুবিও। শুধু তা-ই নয়, জি২০ ত্যাগের কথাও ঘোষণা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আমেরিকা শেষ পর্যন্ত জি২০ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে তাতে বিপাকে পড়বে ভারত। কারণ, সে ক্ষেত্রে সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চীন এবং রাশিয়ার হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার মুখে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে হওয়া নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। অবশ্য এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।

জি২০ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নমনীয় হন কি না, সেটাই এখন দেখার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads