যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “আমাদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতোই সতর্ক থাকতে হবে। এ বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কাউকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দিতে পারি না।”
ইউনূস এমন সময়ে এই নির্দেশনা দিলেন যখন আওয়ামী লীগ তার পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
তাছাড়া দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা একদিন আগেই রোববার এক বক্তৃতায় সকল অপকর্মের জন্য ইউনূসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই সর্বাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
“আমাদের একটি কমান্ড সেন্টার বা সদর দপ্তর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে।”
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার এক খবরে এই বৈঠকের খবর দেওয়া হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই নতুন কমান্ড কাঠামো দক্ষতার সঙ্গে দেশের সব পুলিশ স্টেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করবে।
তুমুল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৪ সালের ৮ অগাস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
শুরুতে আওয়ামী লীগ ও এর মিত্র কয়েকটি দল ছাড়া প্রায় সব দলের নিরঙ্কুষ সমর্থন পেলেও সম্প্রতি বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেতে শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংবাদমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে।
কোণঠাসা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব এক ব্রিফিংয়ে তাদেরকে মাঠে নামতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন। বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্ম থেকেও একই ঘোষণা রয়েছে।
বাধা উপেক্ষা করেই ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন স্থানে ইউনূসের পদত্যাগ চেয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তারের ঘটনার খবরও আসছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার অনুগতরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও গুজব ছড়ানোর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে।
“আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে এই গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।”
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর যে কোনো হামলা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান ইউনূস।
সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি আমরা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হই। এ ব্যাপারে আমাদের অত্যন্ত স্বচ্ছ হতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় নিরাপত্তা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি এবং পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্ট গার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা।