শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যেতেন বিশাল বহর নিয়ে। তা নিয়ে সমালোচনাও কম হতো না। বলা হতো, এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরিবর্তনের ডাক দিয়ে সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে সফরকারী দলের পরিসরের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তার সফরসঙ্গীর তালিকাও বেশ বড়।
পার্থক্য হলো এই যে শেখ হাসিনার সময় সফরসঙ্গীদের একটি তালিকা এবং কর্মসূচি বুকলেট আকারে বের হতো, তা সাংবাদিকদের দেওয়া হতো। কিন্তু ইউনূসের আমলে তেমন কিছু প্রকাশ করা হচ্ছে তো নাই, বলাও হচ্ছে না।
তবে ইউনূস তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছনোর পর তার সফরসঙ্গীদের তালিকা বের করেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন শায়ের। সেই তালিকা ফেইসবুকেও তুলে দিয়েছেন তিনি।
শায়ের লিখেছেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ দলের সদস্য সংখ্যা ১০৪ জন। তার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের দুই মেয়ে মনিকা ইউনূস এবং দীনা আফরোজ ইউনূসও রয়েছেন।
উপদেষ্টা পরিষদের চারজন সদস্যকে নিয়ে এবারের সফর করছেন ইউনূস। তারা হলেন- তৌহিদ হোসেন, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান শুভ্র, ফাওজুল কবির খান।
তাদের সঙ্গে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সবাই গেছেন নিউ ইয়র্কে। তারা হলেন- প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর (মুহাম্মদ ইউনূসের ভাতিজা), জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফায়েজ আহমদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথী।
তিনটি দলের ছয়জন রাজনৈতিক নেতাকেও সফরসঙ্গী করেছেন ইউনূস, যারা নিউ ইয়র্কে পৌঁছার পর আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছে নাজেহাল হক।
এই রাজনীতিকরা হলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, দলটির সদস্য মোহাম্মদ নকিবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা দলের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাস ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকও রয়েছেন সফরকারী দলে।
জনস্বার্থে সম্পূর্ণ তালিকাটি প্রকাশ করা হলো বলে মন্তব্য করেছেন শায়ের। তা প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরও অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় তালিকাটি সঠিক বলেই ধরে নেওয়া যাচ্ছে।
শায়েরের সেই পোস্টে র মন্তব্যের ঘরে অনেকে বিশার বহর নিয়ে সফরের সমালোচনা করেছেন। একজন লিখেছেন, “আমরা তো জানতাম শেখ হাসিনা এই কাম করে, এখন দেখি নোবেল পুরস্কারও এই কাম করে।”
একজন আবার শেখ হাসিনার আমলে সফরকারী দলের সংখ্যা উল্লেখের দাবি জানিয়েছেন। এমন একটি প্রশ্নের জবাবে শায়ের লিখেছেন, ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফরে গিয়েছিলেন ১৩৬ জনের দল নিয়ে।
ইউনূসের বহর নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সিনিয়র সাংবাদিক আরশাদ মাহমুদ লিখেছেন, “আজ ফেসবুকে একাধিক পোস্ট থেকে জানলাম এবারে তার ভ্রমণ সংগীর সংখ্যা ১০৪ জন। সংবাদটা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। ভাবছিলাম শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা কি ইউনূস হয়ে দেশের ক্ষমতায় আসীন হয়েছে?
“খবরটা যতবারই পড়েছি মনটা বিষাদে ভরে গেছে। খালি ভাবছিলাম এই দেশের জনগণ কি কোনদিন লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না? তা না হলে স্বৈরাচার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনুস নামের এই তথাকথিত সৎ ব্যক্তি কি করে স্বৈরশাসকদের মতোই একই কায়দায় দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে।”
এ সম্পর্কিত আরও খবর: