বাংলাদেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলো বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের উদ্যোগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রবিবার কোন সংবাদপত্রে কী শিরোনাম এসেছে।

প্রথম আলো
আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে প্রথম আলো। ‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন দিতে চায় সরকার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। কোনো কারণে ডিসেম্বরে সম্ভব না হলে নির্বাচন বড়জোর মাসখানেক পেছানো হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এবং প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র থেকে জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
এই সূত্রগুলো বলছে, আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে কোনো পরিস্থিতিগত কারণে ডিসেম্বরে সম্ভব না হলে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে ভোট হবে বলে মনে করছেন সরকার-সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কারণ, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজান শুরু হবে। রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর মিলিয়ে দেড়-দুই মাস সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। এরপর কালবৈশাখী ও বর্ষা মৌসুম শুরু হবে। সাধারণত বর্ষায় জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হয় না। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে সম্ভব না হলে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

কালের কণ্ঠ
দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একের পর এক রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে কালের কণ্ঠ। ‘ছয় মাসে ১৬ দলের জন্ম’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কয়েক দিনের মধ্যেই ঘোষণা হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম। এই দলের শীর্ষ ছয়টি পদে কারা আসছেন, তা অনেকটাই চূড়ান্ত হয়েছে। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একাংশের উদ্যোগে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতিও চলছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দলটি গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। এরই মধ্যে এই দলের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান। এই দুই সম্ভাব্য দলের বাইরেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় মাসে ১৬টি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে।

সমকাল
স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে সমকাল। ‘কোনো কাজেই গতি নেই, নাগরিক সেবা লাটে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগে কোনো কাজেই গতি আসছে না। সরকার পতনের পর অনেক জনপ্রতিনিধি পালিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করায় স্থবির হয়ে পড়ে স্থানীয় সরকারগুলোর কার্যক্রম। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে আরেকটি বড় ধাক্কা লাগে মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে দুটি ভিন্ন স্থান থেকে। এ কারণে রুটিন কাজও সঠিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সংস্কার, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সনদ প্রদানসহ সেবামূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাড়ছে জনঅসন্তোষ।

ইত্তেফাক
চরমপন্থিদের উত্থান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে ইত্তেফাক। ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে চরমপন্থিরা!’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে কি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে চরমপন্থিরা? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। শৈলকুপায় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি তিন জনকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে স্থানীয় গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছে জাসদ গণবাহিনীর পক্ষে কালু পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি। তবে ঐ ব্যক্তি আদৌ জাসদ গণবাহিনীর কেউ কি না অথবা আসলেই জাসদ গণবাহিনী ঐ হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) ও জাসদ গণবাহিনী নামে দুইটি চরমপন্থি দলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গত শুক্রবার রাতে রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের গোপন বৈঠকে জাসদ গণবাহিনীর সদস্যরা হামলা চালিয়ে গুলি করে তিন জনকে হত্যা করে। হঠাৎ চরমপন্থি সংগঠনগুলোর বিরোধ প্রকাশ্যে আসায় এলাকায় আতঙ্কের দানা বাঁধছে। চরমপন্থিদের উত্থান আবারও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অশান্ত করে তুলতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যুগান্তর
সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর রমরমা ‘সনদ বাণিজ্য’নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে যুগান্তরও। ‘মোজাম্মেলও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ সারা দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সূচক ক্রমেই ওপরে উঠে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার গলিপথ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সর্বত্র এখন ছিনতাই আতঙ্ক ভর করেছে। সন্ধ্যা নামলেই চারদিকে ছিনতাই-ডাকাতির আতঙ্কে সাধরণ মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পায়। খোদ রাজধানীতে শত শত মানুষের সামনে রামদা দিয়ে রিকশা আরোহীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। এমনকি বাসের মধ্যেও কেউ এখন নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করা ছাড়াও ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই সারা দেশে এ রকম অপরাধ চিত্র বাড়ছে। তবে এত পুলিশ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কেন এত অবনতি হচ্ছে-সেটি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর প্রশ্নের শেষ নেই।

বণিক বার্তা
ভূমি সংস্কার নিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে বণিক বার্তা। ‘স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই ভূমি সংস্কারে হাত দেয়নি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ভূমি সংস্কারের উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরকার ১১টি কমিশন গঠন করলেও প্রান্তিক কৃষকের ভূমি মালিকানা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় কোনো সরকারই ভূমির সংস্কারে হাত দেয়নি। কিছু আইন প্রণয়ন হলেও ভূমি মালিকানার কাঠামোয় কোনো কার্যকর পরিবর্তন আনা হয়নি।

নয়াদিগন্ত
বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা আমলাদের দুর্নীতির তদন্ত বিষয়ক সংবাদকে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে নয়াদিগন্ত। ‘দুদক ও গোয়েন্দা জালে ১২০ আমলা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার অন্যতম সহযোগী ছিলেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বারবার ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার স্বৈরাচারী শাসনকে দীর্ঘায়িত করেন। এসব নির্বাচনে ব্যাপক আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ ওঠে রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বিরুদ্ধে। অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়েই কর্মকর্তারা রাতের ভোট এবং একতরফা ভোটের এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এসব কর্মকর্তার আর্থিক অনিয়মের তদন্তে নামে অন্তর্বর্তী সরকার। অবৈধ ভোটের দায়িত্বে থাকা আমলাদের দুর্নীতি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে পৃথক চারটি চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দুদক ও গোয়েন্দা জালে আটকা পড়তে যাচ্ছেন অন্তত ১২০ জন আমলা।

দেশ রূপান্তর
চরমপন্থিদের উত্থান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন করেছে দেশ রূপান্তরও। ‘অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে চরমপন্থিরা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রিবেণী শ্মশান খালে ফাইব মার্ডারের ২২ বছর পর একই স্থানে একই স্টাইলে ঘটল ট্রিপল মার্ডার। আতঙ্ক আবার দানা বাঁধছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একসময়কার চরমপন্থি অধ্যুষিত ঝিনাইদহে। এরই মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর কালু গ্রুপের প্রধান কমরেড কালু হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নতুন করে আবার চরমপন্থি সংঘাত ছাড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

আজকের পত্রিকা
আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে আজকের পত্রিকা। “ছাত্রদের দল: নতুন দলে ‘ঐক্যে’ জোর” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর কয়েক দিনের মধ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের। তবে শুরুতেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। তাই এখন নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখায় জোর দিচ্ছেন দলটির উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। তবে দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামই যে নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে দলের শীর্ষ পদ ছয়টি নাকি নয়টি এ নিয়ে দলসংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা এখনো চলছে। তাঁরা বলছেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সব পক্ষের নেতৃত্বকে সমন্বয় করে রাজনীতিতে ঐক্যের বার্তা দিতে চায় নতুন দল।

ডেইলি স্টার
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা এবং এই নির্বাচন আয়োজন ঘিরে প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার প্রধান প্রতিবেদন করেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। ‘Local polls possible by June’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার একটি বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব করেছে এ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন।অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন যদি ঐকমত্যে পৌঁছায় তবেই এ বছরের জুনের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে কমিশন।এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে জেলা পরিষদ নির্বাচনও সম্ভব বলে উল্লেখ করেছে সংস্কার কমিশন।