সাঁড়াশি অভিযানের দ্বিতীয় দিনে গ্রেপ্তার ৩৪৩

অভিযানে শুধু গাজীপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪৬ জনকে, যাদের সবাই আওয়ামী লীগ অথবা এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
অভিযানে শুধু গাজীপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪৬ জনকে, যাদের সবাই আওয়ামী লীগ অথবা এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

সারা দেশে যৌথবাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে ৩৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু গাজীপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০০ জনকে, যাদের সবাই আওয়ামী লীগ অথবা এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান এই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গুলি, ৬টি শর্টগান কার্তুজ, তিনটি ছুরি, তিনটি তলোয়ার, একটি কুড়াল, ১০টি ককটেল, ৮টি লাঠি, ৪টি রড এবং ৪টি রামদা।

সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান।

এর আগে দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টের দ্বিতীয় দিনে রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর মধ্যে শ্রীপুর থানায় সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামসহ ৫ জন, কাপাসিয়া থানায় ৩ জন, কালিগঞ্জ থানায় ৪ জন, কালিয়াকৈর থানায় ৩ জন ও জয়দেবপুর থানায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অপরদিকে, গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানায় ৭৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে টঙ্গী পূর্ব থানায় ১১ জন, টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৬জন, পুবাইল থানায় ৫ জনসহ মোট ৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এনিয়ে গত দুই দিনে গাজীপুর জেলায় ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।

এছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে আরও ১১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।

এর মধ্যে, রংপুর বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয় ৩০ জনকে। রংপুর মহানগরী থেকে ৫ জন এবং বিভাগের ৮ জেলা থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

নেত্রকোণায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৯ জন এবং নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভোলায় কোস্ট গার্ডের অভিযানে ১৪ জন, খাগড়াছড়িতে ১০, রাজশাহী মহানগরীতে ৪, চুয়াডাঙ্গায় ৩ জন এবং হবিগঞ্জে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গাজীপুরে শুক্রবার গভীর রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করতে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে আহত হন অন্তত ১৪ জন। যাদেরকে পরবর্তীতে নিজেদের কর্মীসমর্থক বলে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন।

এ ঘটনার পর শনিবার গাজীপুরে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা আওয়ামী লীগ ও এর অনুসারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেধে দিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত আসে সরকার সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করবে।

এছাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় গাজীপুর সদর থানার ওসিকে।

সরকারিভাবে এই সাঁড়াশি অভিযানকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে প্রচার করা হলেও কেন এরকম নাম সেবিষয়ে সরকারি কোনো পর্যায়ের স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে সাবেক প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৫ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা শুরু করে। এরপর বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও দলটির নেতাদের বাড়িতে হামলা চালায়।

পরবর্তীতে এসব ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজ থেকে দেওয়া হয় বার্তা- কঠিন হাতে এসব কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করা হবে।

অবশ্য এরপরও বিভিন্ন এলাকায় অব্যাহত ছিল হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

গাজীপুরে আ. লীগের আরও ১০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads