পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে বাঙালির দীর্ঘ আন্দোলনের পথ ধরে নয় মাস মরণপণ যুদ্ধের পর এসেছিল যে স্বাধীনতা, পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল ভেঙে উড়েছিল লাল-সবুজের পতাকা; সেই স্বাধীন স্বদেশ বিনির্মাণের ৫৪তম বার্ষিকীতে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন ২৬ মার্চ। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় দিনটি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তারের আগমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি গোটা জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে থাকে।
অবশ্য এবার এমন এক সময়ে স্বাধীনতা দিবস সামনে এল, যখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কোথাও নেই যার দিকনির্দেশনায় একটি জাতি স্বাধীনতা পেল বাঙালি জাতির সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগও কার্যত নির্বাসিত। দলটির সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের অনেকেই দেশছাড়া।
বিগত সময়ে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো রেওয়াজে পরিণত হলেও ইতোমধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সেই ভবন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি।
একাত্তরের ২৫ মার্চের মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মানুষ। ওই দিন দিবাগত রাতেই (একাত্তরের ২৫ মার্চ) গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার। এরপর গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, ৩ লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
উদযাপনে নানা কর্মসূচি
এদিকে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা সজ্জিত করা হবে আলোকসজ্জা।
এদিকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এরই মধ্যে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনকে ধুয়ে মুছে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে।
২৬ মার্চ সকালে ঢাকাসহ সারাদেশে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বলে জানানো হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসে ধর্মীয় উপসনালয়ে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরে বিনা টিকিটে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে।
চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ আগামীকাল সকাল ৯ টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।