আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে ইউনূস সরকারের মধ্যে অস্বস্তি

গত কয়েকদিন নিয়মিতই দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের এরকম মিছিল। ফাইল ছবি।
গত কয়েকদিন নিয়মিতই দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের এরকম মিছিল। ফাইল ছবি।

মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার বিকালেই বলেছিলেন, তারা শঙ্কিত নন। কথাটি তিনি জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে। প্রশ্নটি ছিল, আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বর ডাকা কর্মসূচি নিয়ে সরকারের কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর। কিন্তু তার বিকালের নিশঙ্কভাব কেটে যায় রাতেই।

হঠাৎ করেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। মেট্রোরেলের সবকর্মীদের ছুটি বাতিলের ঘোষণা আসে। এরমধ্যে পুলিশ জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বাড়ি যমুনার আশপাশে বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনার অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।

যেখানে বিকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ। তখন রাতে সরকারের তৎপরতার মধ্য দিয়ে অস্বস্তির প্রকাশই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, তাদের বাড়ি-ঘর, দলীয় অফিস কিছুই বাদ যায়নি হামলা থেকে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সবই আগুনে পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের ওপরও আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কারাগারে, কেউ বিদেশে পালিয়ে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আছেন ভারতে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করে বিচার এগিয়ে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই রায় কবে হবে, তার দিন ঠিক হবে আগামী ১৩ নভেম্বর।

এরমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার কয়েকটি সাক্ষাৎকার প্রচারের পর চাঙা আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকে তার প্রচার চালাচ্ছে অনলাইনে। ‘হটাও ইউনূস, বাঁচাও দেশ’ স্লোগানে সেই কর্মসূচির পোস্টার আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায়ও শেয়ার করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঝে-মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করলেও পুলিশ দেখলেই তাড়া করছে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি পালনের সক্ষমতা নেই বলেই ধরে নিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।

১৩ নভেম্বর ডাকা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের এই পোস্টার ভেসে বেড়াচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়।

কিন্তু তারপরই ঢাকা মহানগর পুলিশ খবর দেয়, আওয়ামী লীগের স্লোগান–সংবলিত এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার পরিকল্পনা আঁটছিল দলটির কর্মীরা।

২৫ জনকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, তারা রাজধানী ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এছাড়া ১০-১২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার আশপাশে এক লাখ গ্যাস বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনা করছিলেন।

তারপর আবার মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে। কেন ছুটি বাতিল করা হলো, তা অবশ্য জানায়নি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

আদেশে বলা হয়েছে, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডিএমটিসিএলের মেট্রোরেল ভবন, ডিপো এলাকা, মেট্রোরেল স্টেশন, ডিএমটিসিএলের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্প ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হলো।”

তবে নানা সূত্রের বরাতে খবর এসেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই মেট্রোরেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিষয়ে সতর্কতামূলক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তারপর রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়, আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। লকডাউনের কর্মসূচিতে কেউ মাঠে নামলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করতে হবে।

পাশাপাশি আগামী কয়েক দিন ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বরগুনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও গাজীপুর থেকে বেশ কিছু নেতা–কর্মী ঢাকায় এসেছে বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনার পরই নানা সিদ্ধান্ত আসে।

আইন শৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভাটি হওয়ার কথা ছিল আগামী মঙ্গলবার। রোববার হঠাৎ করে এ বৈঠক ডাকা হয় মূলত আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করতে। এই খবরটি দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads