‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দলটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মহাসচিব শওকত মাহমুদ।
শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। দলটির স্লোগান ‘গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ’।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা ও ইশতেহার পাঠ করেন শওকত মাহমুদ। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান
গত ১৭ই এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি, যার প্রধান ডেসটিনির মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।
অর্থ পাচার ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের মামলায় ১২ বছর কারাভোগের পর গত ১৫ই জানুয়ারি জেল থেকে বের হওয়ার তিন মাসের মাথায় নতুন এই দল নিয়ে হাজির হন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে সামনের সারির নেতাদের নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনীতিতে আসা নতুন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছে এনসিপি। দলটি এখনও নিবন্ধন পায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আটমাসে অন্তত ২২টি রাজনৈতিক দল ও চারটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রতি মাসে গড়ে তিনটি করে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হয়েছে।
আত্মপ্রকাশ করা দলগুলোর মধ্যে আছে, নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, দেশ জনতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জনতার বাংলাদেশ পার্টি, জনতার দল, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)।
এনিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এর আগেও আমরা দেখেছি যখন নির্বাচনের গন্ধ এসে নাকে লাগে, তখন হঠাৎ করেই এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে ব্যাঙের ছাতার মতো”।
এ ধরনের দল তৈরির প্রবণতা দেখা গিয়েছিল এরশাদের আমলেও।
“এরশাদের আমলে বড় দলগুলো এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে সহযোগিতা করেনি বা করতে চায়নি, তখন এরশাদ দেখাতে চেয়েছিল যে দেশে প্রচুর রাজনৈতিক দল আছে। সুতরাং তারা নির্বাচনে এলেতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে”, বলেন তিনি।
এনিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে সবার মধ্যে যে রাজনীতি করলে খুব দ্রুত লাভবান হওয়া যায়। রাজনীতি করলে খুব দ্রুত টাকাপয়সা কামানো যায়, আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো যায়- এটা ভেতরের উদ্দেশ্য আর কি”।
এর বাইরে এসব দলের রাজনীতিতে কতটুকু আদর্শ থাকে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, “মূল যেটা সেটা হচ্ছে এটার পেছনে একটা রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় জড়িত আছে”।
তবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলছে, অনেক দল এলেও তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই দিনশেষে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।