বাংলাদেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনীতে জামায়াত ও পাকিস্তানপন্থিদের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর এসেছে ভারতের সংবাদমাধ্যমে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফয়জুর রহমানের নেতৃত্বে বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ জামানকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এদিকে সোমবার এই সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর এক বিবৃতিতে এই খবরকে মনগড়া বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতের টাইমস গ্রুপের পত্রিকা ইকোনমিক টাইমস ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পঠিত ইংরেজি দৈনিক। দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর লেখা প্রতিবেদনটি সোমবার রাতে প্রকাশিত হয় এর ওয়েবসাইটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে জেনারেল ওয়াকারকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরাতে সম্প্রতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর সেনাসদরে বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে ডেকেছিলেন। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ফলে তার চেষ্টা সফল হয়নি।
এরপর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুরকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইর নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
সেনাবাহিনীর রংপুর ডিভিশনের সাবেক জিওসি ফয়জুর রহমান এক সময় ডিজিএফআইর মহাপরিচালক (ডিজি) ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাকে পদোন্নতি দিয়ে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) করা হয়।
ফয়জুর ব্যর্থ হওয়ার পরও ঘটনাটি নিয়ে সেনাবাহিনীতে উত্তেজনা চলছে দাবি করে ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
ফয়জুরের সঙ্গে অভ্যুত্থান চেষ্টায় ১০ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা এসেছে দীপাঞ্জন রায়ের প্রতিবেদনে।
তারা হলেন- পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মুশফিকুর রহমান, মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মো. তারেক, মেজর জেনারেল হোসাইন মশিউর রহমান, মেজর জেনারেল কামরুল হাসান, মেজর জেনারেল আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, মেজর জেনারেল রিদওয়ানুর রহমান, মেজর জেনারেল এমাদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর জেনারেল এস এম কামাল হোসেন।
বাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা যারা চালাচ্ছেন, তাদের সমর্থনে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, আবু বেলাল মো. শফিউল হক, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুরকে পাকিস্তানপন্থি এবং কট্টরপন্থি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপরীতে জেনারেল ওয়াকারকে দেখানো হয়েছে উদারপন্থি হিসাবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাসখানেক আগে সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ পান ওয়াকার। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার খবর সর্বপ্রথম ওয়াকারের কাছ থেকেই এসেছিল। তিনিই বলেছিলেন, এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারর গঠিত হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ছয় মাস পর জেনারেল ওয়াকার গত মাসে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বেশ চড়া সুরে কথা বলেন। তিনি নির্বাচনের তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি হানাহানি বন্ধ করতে সব পক্ষকে সতর্ক করে দেন।
তার দুই সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনীতে তাকে সরিয়ে দেওয়ার খবর এল। ইকোনমিক টাইমসের এই প্রতিবেদন ইন্ডিয়া টু ডেতেও প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস এবং ইন্ডিয়া টুডে সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা এবং চেইন অব কমান্ড ভাঙার মতো ভিত্তিহীন ও মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
“এই প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সুস্পষ্টভাবে একটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার অংশ, যা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।”
ইকোনমিক টাইমস এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের ভুয়া খবর প্রকাশ করেছে অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, বারবার এ ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার তাদের উদ্দেশ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
“কিছু অনলাইন পোর্টাল ও বিতর্কিত টেলিভিশন চ্যানেলও এই মিথ্যাচার প্রচারে যুক্ত হয়েছে, যা সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।”
জেনারেল ওয়াকারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ঐক্যবদ্ধ রয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ এবং সেনাপ্রধানের দক্ষ নেতৃত্বে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।