শেখ হাসিনাতেই আস্থা আওয়ামী লীগের, সুযোগের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা

কিছু শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখছে আওয়ামী লীগ। বিপর্যস্ত দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের দলের কোনো পর্যায়ে ভিন্ন কোনো চিন্তা নেই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, কথা বলছেন। গত আট মাসে নিহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, গত আট মাসে দলের কর্মীদের মনোবল বাড়িয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ পেলে কঠিন লড়াইয়ে প্রস্তুত দলটির তৃণমূলের কর্মীরা।

তবে খুব তাড়াহুড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ। মাঠ পর্যায় প্রস্তুত রেখে সুযোগের অপেক্ষায় থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। এজন্য নির্বাচনের সময়কে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় দলটি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ প্রায় ৭৬ বছর বয়সে এসে গত ৫ আগস্টের পর বেশি সংকটে পড়েছে। তবে গেল আট মাসে দলটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উপর আস্থা রেখে এরমই মধ্যে নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে মিছিল করছে। ধীরে ধীরে এই মিছিলের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।

গত বছরের পাঁচই আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের জেরে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পতন হয়। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা দলটির নেতৃত্বের একটা বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।

আর দেশের ভেতরে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এর উপর হামলা নির্যাতন আর মামলার ভয়ে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে দলটির তৃণমূলের কর্মীদের। তবে আট মাস পরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দলটি।

তবে তাড়াহুড়া করে সব শক্তি দিয়ে মাঠে নামতে চায় না আওয়ামী লীগ। রাজনীতিতে ফিরতে নির্বাচনের সময়কে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় দলটির। নেতারা তারা মনে করেন, অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়লে সরকারকে সব দলের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর তা হলে আওয়ামী লীগের জন্য সুযোগ আসতে পারে।

কিন্তু দল নিষিদ্ধ করার বিষয় এলে আওয়ামী লীগ তখন ঝুঁকি নিয়েই কর্মসূচিতে মাঠে থাকার চেষ্টা করবে।

ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা দ্য সান ২৪ কে বলেন, “ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে সব রকম চেষ্টা করছে। মব করে, তথাকথিত সমন্বয়দের লেলিয়ে দিয়ে, জামায়াত-বিএনপিকে দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে ঢালাও ভাবে কর্মীদের গ্রেপ্তার করানো হচ্ছে। রেহায় পাচ্ছে না সাধারণ সমর্থকও।”

তিনি আরও বলেন, “গেল আট মাসে নেতাকর্মীদের আমরা মনোবল বাড়িয়েছি। দলীয় সভাপতির নির্দেশ পেলে আরও শক্তভাবে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ।”

“কিছু নেতা বিদেশে আশ্রয় নিলেও কোটি কোটি নেতাকর্মী দেশেই আছে, তারা এক সাথে মাঠে নামলে তখন ইউনূসকে পালানো ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।” বলেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা।

বক্তব্য দেওয়া ওই নেতা নাম-পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেন। তার ভাষ্য, নাম প্রকাশ হলেও তার নির্বাচনী এলাকায় আবারও জামায়াত-শিবির হামলা চালাবে, নিরীহ কর্মীদের গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।

বিদেশে অবস্থান করা নেতারা নিয়মিত দেশের ভেতরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আর এই যোগাযোগের ভিত্তিতে দিবসভিত্তিক ঝটিকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা বেশ সক্রিয় হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে দলের কর্মকাণ্ড চলছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বা নির্দেশনা সবাই মেনে চলছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিপর্যস্ত দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের দলের কোনো পর্যায়ে ভিন্ন কোনো চিন্তা নেই।”

আরও পড়ুন