মার্কিন শুল্কের চাপে বাংলাদেশ, পোশাক খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ।

বিশ্লেষক ও উদ্যোক্তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তৈরি পোশাক শিল্পসহ রপ্তানি নির্ভর খাতগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।

এই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের রপ্তানি অর্থনীতির জন্য একটি “ভয়াবহ সংকেত” হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বাংলাদেশে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক নিয়ে তীব্র চাপের মুখে পড়েছে, সে অবস্থায় আজ ৯ জুলাই বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও কারো কারো শঙ্কা, এই আলোচনায় তেমন কোনো সুরাহা না এলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত শুধু ক্ষতির মুখে পড়বে না, দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হবে।

কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০২৪ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, “শুল্ক বাড়ানো হলে আমাদের রপ্তানি হঠাৎ করে বড় ধাক্কা খাবে। অনেক ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা টিকে থাকতে পারবে না।”

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের বক্তব্যে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “যদি আমরা ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজারে ঢুকি, আর ভিয়েতনাম ২০ শতাংশে প্রবেশ করে, তাহলে ক্রেতারা আমাদের নেবে কেন?”

কেন এই শুল্ক?

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বাংলাদেশের মতো কিছু দেশ ‘অন্যান্য সুবিধা’র মাধ্যমে মার্কিন শিল্পের জন্য অন্যায্য প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। তাই চীন, ভারত, বাংলাদেশ, তুরস্ক ও মেক্সিকোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে।

তবে ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ এই তালিকার বাইরে রয়ে গেছে। এ নিয়ে দেশের বাণিজ্য নীতিতে কৌশলগত ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পথ এখনও বন্ধ হয়ে যায়নি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, “আমরা আলোচনার মধ্যেই আছি। আশা করি মার্কিন প্রশাসন আমাদের অবস্থান বুঝবে। প্রয়োজনে আমরা নতুন সুবিধা চেয়ে পুনরায় অনুরোধ করব।”

অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমানের কণ্ঠেও শোনা গেল একই সুর।

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, “ভিয়েতনাম যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করে কম শুল্ক নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশও চাইলে আলোচনার মাধ্যমে সুবিধা আদায় করতে পারে।”

অবশ্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এই শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাই করলেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ৬১৫ কোটি ডলার। অথচ আচরণটা হচ্ছে বড় ঋণখেলাপির মতো।”

সামনে কী?

৯ জুলাই ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য সচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।

এই বৈঠকে শুল্ক প্রত্যাহার অথবা হ্রাসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করানোই হবে প্রধান লক্ষ্য।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনায় সফল না হলে বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, নইলে তৈরি পোশাক খাতে বড় বিপর্যয় এড়ানো যাবে না।

এ সম্পর্কে ড. সেলিম রায়হানের ভাষ্য, “আমরা এখনো শুধু মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীল। বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যেও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন