যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাই ঘটল। ভারতে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের প্রথম খড়গ পড়ল তৈরি পোশাক পণ্যে।
তৈরি পোশাকবাহী চারটি ট্রাক বৃহস্পতিবার ভারতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ ঢোকার অনুমতি না দেওয়ায় বেনাপোল থেকে সেগুলো ফেরত এসেছে।
প্রথম আলো লিখেছে, গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তিনটি গার্মেন্টের চার ট্রাক পণ্য বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো যাওয়ার অনুমতি পায়নি।
গত মঙ্গলাবারই ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইন্ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) এক সার্কুলারে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়।
২০২০ সালে পাওয়া এই সুবিধার মাধ্যমে ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করতে পারছিল।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের ক্ষমতায় পালাবদলের পর কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয় নয়া দিল্লি।
বিষয়টি রাজনৈতিক বলে মনে করা হলেও পরদিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল যখন বলেন যে নেপাল কিংবা ভুটানে বাংলাদেশি পণ্যের চালান পাঠাতে বাধা নেই, তখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা জেগে ওঠে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের দাবি অনেক দিন ধরেই করে আসছিল ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি এইপিসি। এখন ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিতে ভারতের সুবিধা হওয়ায় এই বিষয়টি সামনে আসে।
এদিকে পণ্যগুলো পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের স্থানীয় ব্যবস্থাপক বসির আহমেদকে উদ্ধৃত করে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এসব পণ্য যাচ্ছিল ভুটান।
তিনি বলেন, এসব ট্রাকের পণ্য কলকাতায় খালাসের কথা ছিল। সেখান থেকে ভারতীয় ট্রাকে সড়কপথে ভুটানে যেত।
ভুটানে পণ্য পরবিহনে কোনো বাধা না থাকার কথা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে মুখপাত্র বললেও তৈরি পোশাক পণ্যের ক্ষেত্রে মাঠে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) সজিব নাজির ডেইলি স্টারকে বলেন, “ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণে পেট্রাপোল কাস্টমস তৃতীয় দেশের পণ্যের জন্য কার্গো পাস দেয়নি। তবে ভারতে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে।”
যে চার ট্রাক পণ্য ফেরত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভারতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই বেনাপোলে পৌঁছে গিয়েছিল বলে জানান এগুলোর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পদ্মা ট্রেডিংয়ের মালিক অনিক আহমেদ।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, “পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।”
তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে।
সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ার কথা বলছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা।
বেনাপোল বন্দর সূত্র জানায়, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়।
তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে।
নানা কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য আকাশ পথে রপ্তানি করেন। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিয়ে ভারতের বিমানবন্দর দিয়ে তা রপ্তানি করলে তাদের লাভ হয়।
এখন ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় পোশাক রপ্তানিতে তার প্রভাব পড়বে।