সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ব্যাটিং-ই যেন বিশ্বকাপে দলের সবচেয়ে বড় শক্তি। তিন ম্যাচে দ্বিতীয়বার গড়েছে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর মাঝে গড়েছে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। চমৎকার পারফরম্যান্সে ওয়ানডে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেওয়ার খুব কাছে পৌঁছে গেছে নিগার সুলতানার দল।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।
নিগার সুলতানার বিধ্বংসী ৮৩ রানের সঙ্গে ফারজানা হক ও শারমিন আক্তারের ফিফটিতে ২৭৬ রান করে তারা। এই সংস্করণে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এর আগে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭১ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের ২৭৬ রানের জবাবে অষ্টম উইকেটে বিশ্ব রেকর্ড জুটির পরও ২৪২ রানের বেশি করতে পারেনি স্কটল্যান্ড।
আইসিসি উইমেন’স বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা তিন জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ফিরল বাংলাদেশ। বাছাইয়ে বাকি দুই ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট পেলেই ভারত বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের খেলা।
এখন পর্যন্ত রান রেটে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। তাই পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচ কম ব্যবধানে হারলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হতে পারে তাদের।
বাংলাদেশের দুর্দান্ত যাত্রার বড় কারিগর নিগার সুলতানা। ঝড়ো সেঞ্চুরিতে আসর শুরুর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এবার তার ব্যাট থেকে এলো ৫৯ বলে ৮৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস।
ওয়ানডেতে টানা তিনটি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার তিনি। গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই ফিফটি করেছিলেন ফারজানা।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আবার শুরুতেই ইশমা তানজিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাত্র ১৪ রান করতে পারেন ২৮ বছর বয়সী ওপেনার। তিন ম্যাচে তার সংগ্রহ সাকুল্যে ২৪ রান।
দলের ওপর চাপ বাড়তে দেননি ফারজানা ও শারমিন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ১২৭ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। একইসঙ্গে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম জুটি হিসেবে ১ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন তারা।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ১০৪ রানের জুটি গড়েন ফারজানা ও শারমিন। সব মিলিয়ে এই সংস্করণে তাদের শতরানের জুটি ৪টি। দেশের আর কোনো জুটির ২টির বেশি শতরান নেই।
ক্যারিয়ারের ১৫তম ফিফটি ছুঁতে ৬৭ বল খেলেন ফারজানা। এরপর আর টিকতে পারেননি। ৮৪ বলে ৫৭ রান করে ফেরেন তিনি।
শারমিনের ব্যাট থেকেও আসে ৫৭ রানের ইনিংস। ৭৯ বলে ৭টি চার মারেন ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। গত বছর জাতীয় দলে ফেরার পর থেকে ৯ ইনিংসে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। সব মিলিয়ে ৫৯.৫০ গড়ে তার সংগ্রহ ৪৭৬ রান। এই সময়ে যা দলের সর্বোচ্চ।
এরপর দ্রুত দুটি উইকেট হারালে দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নিগার সুলতানা। ফাহিমা খাতুনকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৪ বলে গড়েন ৬১ রানের জুটি।
মাত্র ৩৯ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম ফিফটি এটি। গত বছর আইরিশদের বিপক্ষে ৪১ বলে ফিফটি করেছিলেন শারমিন।
ফিফটির রেকর্ড এরপর একই ছন্দে এগিয়ে দলকে রেকর্ড সংগ্রহে নিয়ে যান নিগার সুলতানা। ১১ চারে তিনি সাজান ৫৯ বলের ইনিংস। ফাহিমার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৬ রান।
টানা তৃতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ১৪০.৬৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেন নিগার সুলতানা। দেশের ব্যাটারদের ফিফটি করা ইনিংসগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে দ্রুততম।
রান তাড়ায় শুরুতেই স্কটিশ শিবিরে ধাক্কা দেন মারুফা আক্তার। পাওয়ার প্লের ভেতরে আরও ২ উইকেট নেন নাহিদা আক্তার।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন সারাহ ব্রাইস ও আইলসা লিস্টার। রান আউটে ভাঙে দুজনের ৪৫ রানের জুটি। পরে ৪২ রান করা সারাহকে ফিরতি ক্যাচে আউট করেন জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা।
মাত্র ১১০ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বড় জয়ের সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই প্রিয়ানাজ চ্যাটার্জি ও র্যাচেল স্ল্যাটারের প্রতিরোধ। অষ্টম উইকেটে দুজন মিলে গড়ে তোলেন ১২৪ বলে ১১৫ রানের জুটি।
ওয়ানডেতে ইতিহাসে ৭ উইকেট পড়ার পর এটিই প্রথম শতরানের জুটি। ইনিংসের ১৪ বল বাকি থাকতে নাহিদার বলে স্টাম্পড হন চ্যাটার্জি। ভাঙে বিশ্ব রেকর্ড জুটি। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ৬৩ বলে ৬১ রান করেন চ্যাটার্জি।
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৭৩ বলে ৬১ রান করেন ৯ নম্বরে নামা স্ল্যাটার। ওয়ানডেতে ৯ নম্বরে এর চেয়ে বড় ইনিংস আছে শুধু ভারতের পূজা ভাস্ত্রাকারের, ৬২ রান।
বাংলাদেশের হয়ে ৪০ রানে ৪ উইকেট নেন নাহিদা।
লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে বৃহস্পতিবার নিজেদের পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৬ (ইশমা ১৪, ফারজানা ৫৭, শারমিন ৫৭, নিগার ৮৩, সোবহানা ৯, রিতু ১২, ফাহিমা ২৬, নাহিদা ২*; স্ল্যাটার ৬-১-৩৩-১, ক্যাথরিন ব্রাইস ৯-০-৫৩-২, অ্যবেল ৮-০-৩৭-১, চ্যাটার্জি ৬-০-৩৪-১, মাকসুদ ১০-০-৪৮-০, ফ্রেজার ৯-০-৫৪-১, ম্যাককোল ২-০-১৭-০)
স্কটল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪২/৯ (পিপ্পা ১৭, ড্রামন্ড ১, ক্যাথরিন ব্রাইস ৫, সারাহ ব্রাইস ৪২, লিস্টার ১৮, ম্যাককোল ৫, ফ্রেজার ৮, চ্যাটার্জি ৬১, স্ল্যাটার ৬১*, অ্যাবেল ০, মাকসুদ ৪*; মারুফা ৫-১-১৯-১, নাহিদা ১০-০-৪০-৪, ফাহিমা ৮-০-৪৬-০, সুমনা ১০-০-৪৩-২, রাবেয়া ১০-০-৩৩-১, রিতু ৩-০-২০-০, সোবহানা ৪-০-৩১-০))
ফল: বাংলাদেশ ৩৪ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: নিগার সুলতানা