টানাপোড়েনের মধ্যেই কূটনৈতিক তৎপরতা, দোভাল-খলিল বৈঠক

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করলেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ফাইল ছবি, সৌজন্যে পিটিআই
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করলেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ফাইল ছবি, সৌজন্যে পিটিআই

মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান নয়াদিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি তাকে ঢাকায় যাওয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।

দোভালের সঙ্গে এমন এক সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনপূর্ণ।

বুধবারের ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) সপ্তম এনএসএ-স্তরের বৈঠকের ফাঁকে।

গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সহিংস বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চায় ঢাকা, যে অনুরোধ জানানো হয় ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের অল্প কিছুদিন পর।

চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই মাসে শিক্ষার্থী আন্দোলন দমনে কথিত ভূমিকার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

তাছাড়া গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে ভারতকে।

সংবাদমাধ্যম ডেক্কান কর্নিকলসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লস্কর শীর্ষ কমান্ডার সাইফুল্লা সাইফ সম্প্রতি বাংলাদেশি সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লিতে বিস্ফোরণের কয়েকদিন আগেই ঢাকার বনানীতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন পাক জঙ্গি নেতা সাইফ। অন্তত সাত জন জঙ্গি নেতা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর কর্পোরেশনের প্রশাসক ছাড়াও সরকারের দুই আমলাও তাদের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ।

একদিকে শেখ হাসিনা ও কামালের প্রত্যর্পণের ইস্যু এবং অন্যদিকে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থানে বর্তমান ইউনূস সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার মতো অভিযোগের মধ্যে খলিলের এই বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা।

বৈঠক নিয়ে এখনও ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া না গেলেও একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রায় আধা ঘণ্টার ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কেবল তারা দু’জনই ছিলেন।

দিল্লি যাওয়ার আগে খলিল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।

‘প্রত্যর্পণ না করলে অমিত্রসুলভ আচরণ’

এদিকে, বাংলাদেশ আবারও ভারতকে চিঠি দিয়ে দেশটির দুই নেতার “অবিলম্বে প্রত্যাবর্তন” নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি সতর্ক করে বলেছে- শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিলে তা “চরম অমিত্রসুলভ আচরণ এবং ন্যায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা” হিসেবে বিবেচিত হবে।

দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তির উল্লেখ করে ঢাকা বলেছে, রায়ের মাধ্যমে হাসিনা “মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত” হয়েছেন।

ভারত তার সরকারি প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তারা ট্রাইব্যুনালের রায় “আনুষ্ঠানিকভাবে নোট” করেছে এবং বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারতের “অঙ্গীকার” পুনর্ব্যক্ত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ভারত “সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করে যেতে আগ্রহী।”

যদিও ২০১৩ সালের দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, অনুরোধটি যদি “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বা “সৎ উদ্দেশ্যে না করা” বলে মনে হয়, ভারতের তা প্রত্যখ্যান করার অধিকার রয়েছে। এই একই বিষয়ে শেখ হাসিনা নিজেও তার আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন।

ওই চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে এইসব প্রত্যাখ্যানের কারণ স্পষ্টভাবে রয়েছে।

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ

এদিনের বৈঠকের পটভূমি ছিল কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ, যা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।

এনএসএ-স্তরের সপ্তম এই বৈঠকে কনক্লেভের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে ছিল- সমুদ্র নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবিলা, মানবপাচার ও আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ দমন, সাইবার নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।

এসব বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করার কথা ওই বৈঠকে।

অংশগ্রহণকারীরা ২০২৬ সালের রোডম্যাপ ও কর্মপরিকল্পনাও আলোচনা করবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, সিএসসির মূল লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং আন্তর্জাতীয় হুমকি ও অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, দ্য হিন্দু

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads