মার্কিন ‍শুল্কের বোঝা কমাতে আমদানির ফাঁদে বাংলাদেশ?

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

শুল্ক কমাতে নানাভাবে দেন-দরবারের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রকে বড় অঙ্কের আমদানির ‘টোপ’ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে দেশটি থেকে থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আমদানি বাড়াতে হবে এক সময় ‘রাইজিং টাইগার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দেশটিকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্কের হার কম হবে।

বাংলাদেশ নতুন করে যে পরিমাণ আমদানির পরিকল্পনা করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে, যা এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সব ঠিকঠাক থাকলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সময় রয়েছেে এক বছরেরও কম সময়। এ অবস্থায় যেকোনো প্রতিশ্রুতির ঘানি পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের ঘাড়েই বর্তাবে।

দুই দফা আলোচনার পর তৃতীয় দফা আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা ছেড়েছে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।

প্রতিবারের মতো এবারও সেই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীও প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।

ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার থেকে শুরু করে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিন আলোচনা করবেন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে ২৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ দেশটি থেকে আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। ঘাটতি কমানোর অংশ হিসেবে আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে সরকার।

এ ছাড়া গত সপ্তাহে দেশটি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর সাত লাখ টন গম আমদানি করতে এমওইউ করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এলএনজি, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে সোমবার বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নতুন করে যে পরিমাণ আমদানির পরিকল্পনা করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগামীতে দেড় বিলিয়ন ডলার আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ১২৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার চুক্তি করেছে। তাদের পক্ষে কোনোভাবেই বাণিজ্য ঘাটতি ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার। আগামী এক থেকে দেড় বছরে ঘাটতি অনেক কমে যাবে। এ কারণে তারা আশা করছেন, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্কহার ভিয়েতনামের চেয়েও কম হবে। 

তিনি বলেন, তিন দিনের আলোচনায় সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিবেশ তৈরি হবে। চুক্তির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইস্যু আছে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাণিজ্য ইস্যু নয়। শুল্ককেই যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

দেশের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল নিজ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিশেষ করে গম, তুলা, সয়াবিন কেনার বিষয়ে সে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। হয়তো তারা চুক্তিও করবেন। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, সয়াবিন ও গম আমদানি বাড়াতে দেশটির এ খাতে ব্যবসায়ীদের আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়বে। তারা তুলা আমদানি বাড়াতে দু-একদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কটন কাউন্সিলের (এনসিসিএ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন, তিন বছর আগে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করত। আগের অবস্থায় নিতে পারলে সেখানেই এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও সয়াবিন আমদানি বাড়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও একাধিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সয়াবিন আমদানি করেন– এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। এসব খাতের বাইরে আরও কিছু ব্যবসায়ীর যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে কিংবা অনলাইনে সভা করার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন