প্রতিপক্ষ হিসেবে থাইল্যান্ডকে পেয়ে যেন জ্বলে উঠলো বাংলাদেশের মেয়েরা। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন নিগার সুলতানা, করলেন সেঞ্চুরি, তা-ও আবার ৭৮ বলে। আর অপরাজিত ৯৪ রানের দারুণ ইনিংস খেললেন শারমিন আক্তার। দুই জনে উপহার দিলেন রেকর্ড গড়া জুটি। বোলিংয়ে পাঁচটি করে উইকেট নিলেন ফাহিমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস। থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে দিলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শুভ সূচনা করল বাংলাদেশ।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে লাহোরে বৃহস্পতিবার ১৭৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। ২৭২ রানের লক্ষ্য দিয়ে ফাহিমা ও জান্নাতুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে থাইল্যান্ডকে তারা গুটিয়ে দিয়েছে কেবল ৯৩ রানে।
ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। গত নভেম্বরে আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়েছিল তারা।
৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলে জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান অধিনায়ক নিগারের। মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি শারমিন।
৪০ ওভার শেষে সেঞ্চুরির সম্ভাবনায় এগিয়ে ছিলেন শারমিন, সে সময় ৭৪ রানে ব্যাট করছিলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার, নিগারের রান তখন ছিল ৪৫।
পরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে শারমিনকে পেরিয়ে শতরানের সীমানায় পা রাখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শারমিন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২৬ বলে ৯৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ১৫২ রানের জুটি। যা ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম দেড়শ রানের জুটি।
এই দুজনের আগে এ দিন ফিফটি করেন অভিজ্ঞ ওপেনার ফারজানা হক। এই প্রথম ওয়ানডেতে কোনো ম্যাচে পঞ্চাশ ছুঁতে পারলেন বাংলাদেশের তিন ব্যাটার।
পরপর দুই জুটিতে এবারই প্রথম শতরানের দেখা পেল বাংলাদেশ। একই ওয়ানডেতে শতরানের দুটি জুটিও এই প্রথম।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বিদায় নেন ওপেনার ইশমা তানজিমকে (৮)। সেই ধাক্কা সামলে দলকে ভালো ভিত গড়ে দেন ফারজানা ও শারমিন।
ফারজানার ফিফটি আসে ৭৪ বলে। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা ব্যাটার এবার আউট হন ৮২ বলে ৫৩ রান করে।
গত কিছুদিন ধরে দারুণ ছন্দে থাকা শারমিন শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন। নিগার ক্রিজে আসার সময় তিনি খেলছিলেন ৪৬ রানে। একটু পরই বাউন্ডারিতে ফিফটি পেরিয়ে যান তিনি ৭৪ বলে।
এরপর তার রানের গতি একটু বাড়ে। তবে অন্য প্রান্তে একের পর এক বাউন্ডারিতে দ্রুততায় এগোতে থাকেন নিগার। ফিফটিতে পা রাখেন তিনি ৪৫ বলে।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে অধিনায়কের ব্যাটের ধার বাড়ে আরও। ৪৭তম ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে তিনি পেরিয়ে যান শারমিনের রান। পরের দুই ওভারেও তার ব্যাট থেকে আসে দুটি বাউন্ডারি। এরপর শেষ ওভারের বাউন্ডারিতে পূর্ণ হয় সেঞ্চুরি।
এতদিন বাংলাদেশের একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন ফারজানা। দুটি সেঞ্চুরি তার। এখন তার পাশে যোগ হলো নিগারের নাম।
ফারজানার একটি সেঞ্চুরি ছিল ১৫৬ বলে, আরেকটি ১৬৫ বলে। নিগারের ৭৮ বলের সেঞ্চুরি তাই অনায়াসেই বাংলাদেশের দ্রুততম।
বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ বলে নিগারের ইনিংসও শেষ হয়। জুটি থামে ১৫২ রানে। গত ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফারজানা ও শারমিনের ১৪৩ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।
এই ম্যাচে নিগারের ৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংসে চার ১৫টি। বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারির রেকর্ড এটিই। পেছনে পড়ে যায় গত ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ বাউন্ডারি।
আইরিশদের বিপক্ষে সেদিন শতরানের সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ৮৯ বলে ৯৬ করে আউট হয়ে যান শারমিন। এবার থাইল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি অপরাজিত রইলেন শতরান থেকে ছয় রান দূরে।
নব্বইয়ে একাধিকবার আটকে পড়া বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার এখন তিনিই।
ব্যক্তিগত আর জুটির এসব রেকর্ডের ফুলে গাঁথা হয়ে যায় দলীয় রেকর্ডের মালা। ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ২৭১ রান। ওয়ানডেতে যা তাদের সর্বোচ্চ।
আগের সর্বোচ্চ ২৫২ ছিল গত নভেম্বরে আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে।
রান তাড়ায় থাইল্যান্ডকে একদমই সুবিধা করতে দেননি দুই স্পিনার ফাহিমা ও জান্নাতুল। ৫টি করে উইকেট নেন তারা। নারী ওয়ানডের ইতিহাসে এক ইনিংসে দুই বোলারের ৫ উইকেট নেওয়ার প্রথম কীর্তি এটি।
২৫ বছর বয়সী অফ স্পিনার জান্নাতুল মাত্র ৭ রানে নেন ৫ উইকেট। এর আগে দুটি ওয়ানডে খেলেন তিনি। এর একটিতে বোলিং করে উইকেট পাননি। প্রায় সাত বছর পর খেলতে নেমে এবার ভেল্কি দেখালেন তিনি।
৩২ বছর বয়সী লেগ স্পিনার ফাহিমা অনেক দিন ধরেই বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় ভরসা। ২১ রানে তিনি নেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি পেলেন পাঁচ উইকেট, স্বাভাবিকভাবেই ওয়ানডেতে এটা তার সেরা বোলিং।
ছয় দলের এই বাছাইপর্ব থেকে দুটি দল খেলবে আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৩ (ইশমা ৮, ফারজানা ৫৩, শারমিন ৯৪*, নিগার ১০১; সুথিরুয়াং ৬-০-৪০-০, মায়া ৬-০-২৮-১, পুথাওং ১০-০-৪১-১, বুচাথাম ১০-০-৪৬-০, কামচম্ফু ৯-০-৫৮-১, চাতুরংগ্রাত্তানা ৬-০-৩৬-০, লাওমি ৩-০-১৮-০)
থাইল্যান্ড: ২৮.৫ ওভারে ৯৩ (বুচাথাম ১৭, সুথিরুয়াং ২২, কঞ্চারায়েঙ্কাই ৫, চান্থাম ৭, চাইওয়াই ১৫, মায়া ০, পুথাওং ৬*, সুয়াঞ্চনরাথি ৩, লাওমি ৪, চাতুরংগ্রাত্তানা ১, কামচম্ফু ৬*; মারুফা ৫-১-১৬-০, নাহিদা ৫-০-৩০-০, ফাহিমা ৮.৫-১-২১-৫, রাবেয়া ৫-১-১৮-০, সুমনা ৫-৩-৭-৫)
ফল: বাংলাদেশ ১৭৮ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: নিগার সুলতানা