সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে জয় নিয়ে শিরোপার দুয়ারে বার্সেলোনা

মার্তিনেজের এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া।
মার্তিনেজের এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া।

সাত গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রেয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে অনেকটা এগিয়ে গেল কাতালান দলটি। আর তাই শেষ বাঁশি বাজতেই গ‍্যালারিতে গান শুরু, ‘চ‍্যাম্পিয়ন’, ‘চ‍্যাম্পিয়ন!’

লা লিগার গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে রোববার ৪-৩ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের দল। চ‍্যাম্পিয়ন হতে শেষ তিন ম‍্যাচে কেবল একটি জয় প্রয়োজন তাদের।

চমৎকার হ‍্যাটট্রিকেও মৌসুমে বার্সেলোনার বিপক্ষে রেয়ালের চতুর্থ হার এড়াতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপে। বার্সেলোনার হয়ে জোড়া গোল করেন রাফিনিয়া। লামিনে ইয়ামাল ও এরিক গার্সিয়া করেন একটি করে গোল। শুরুতে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর প্রথমার্ধেই গোল চারটি করে তারা।

৩৫ ম‍্যাচে ২৬ জয় ও চার ড্রয়ে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও সংহত করল বার্সেলোনা। তিন রাউন্ড বাকি থাকতে তাদের চেয়ে ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ায় রেয়ালের শিরোপা ধরে রাখার পথ বহুগুণ কঠিন হয়ে গেল।

ফল যা বলছে, লড়াইয়ে দুই দলের পার্থক‍্য ছিল আরও বড়। প্রায় ৬৩ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন‍্য ২৩টি শট নেয় বার্সেলোনা। এর নয়টি ছিল লক্ষ‍্যে। অন‍্যদিকে, রেয়াল নয় শটের পাঁচটি রাখতে পারে লক্ষ‍্যে।

প্রতিপক্ষের মাঠে রেয়ালের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। পঞ্চম মিনিটে সফল স্পট কিকে রেয়ালকে এগিয়ে নেন এমবাপে। ডি বক্সে তাকেই বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি ফাউল করায় পেনাল্টি পায় সফরকারীরা।

এই গোলে দায় বেশি তরুণ ডিফেন্ডার পাউ কুবার্সির। তার ভুলেই ডি বক্সে বল পেয়ে যান এমবাপে। বিপদ দেখে বেরিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তাকে ফাউল করে বসেন স্ট্যান্সনি। পেনাল্টিতে ঠিক দিকে ডাইভ দিলেও গতিময়ে শটের জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি তিনি।

তিন মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে থিবো কোর্তোয়ার পরীক্ষা নেন গার্সিয়া। ঝাঁপিয়ে বল ঠেকিয়ে দেন অভিজ্ঞ বেলজিয়ান গোলরক্ষক।

চতুর্দশ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করেন এমবাপে। ভিনিসিউস জুনিয়রের দারুণ থ্রু বল ধরে ওয়ান-অন-ওয়ানে স্ট্যান্সনিকে এড়িয়ে জাল খুঁজে নেন ফরাসি তারকা।

ক্লাসিকোর সবকটিতে জিতল বার্সেলোনা। ছবি: রয়টার্স

চ‍্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফিরতে লেগে ৪-৩ গোলে হারের তেতো স্মৃতি নিয়ে খেলতে নেমে এমন শুরুর পরও ভেঙে পড়েনি বার্সেলোনা। করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ।

সপ্তদশ মিনিটে ইয়ামালের গতিময় শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন কোর্তোয়া। পরের মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে জেরার্দ মার্তিনের শট ফেরান তিনি।

সেই কর্নার থেকেই ব্যবধান কমান এরিক গার্সিয়া। ফেররান তরেসের কর্নারে কাছের পোস্ট থেকে ফ্লিক করেন রেয়ালের ফ্রান গার্সিয়া। ঠাণ্ডা মাথার হেডে জাল খুঁজে নেন পেছনেই থাকা এরিক গার্সিয়া। কিছুই করার ছিল না কোর্তোয়ার।

রেয়ালের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে ৩২তম মিনিটে সমতা ফেরায় বার্সেলোনা। ডি বক্সে তরেসের বাড়ানো বল ধরে দারুণ আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন ইয়ামাল। কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে যাননি তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডকে। যথেষ্ট সময় পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় দূরের পোস্ট দিয়ে শট নেন তিনি।

দুই মিনিট পর এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। মাঝমাঠে সতীর্থ দানি সেবাইয়োসের জন্য বল হারিয়ে ফেলেন এমবাপে। বল ধরে সরাসরি আক্রমণে যায় স্বাগতিকরা। পেদ্রির কাছ থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন রাফিনিয়া।

৪২তম মিনিটে ইয়ামালের চমৎকার ক্রসে খুব কাছ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রাফিনিয়া। পরের মিনিটে ফের পেনাল্টি পায় রেয়াল। তবে জুড বেলিংহ্যাম অফসাইডে থাকায় সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি এর্নান্দেস এর্নান্দেস।

৪৫তম মিনিটে রাফিনিয়ার গোলে ব্যবধান আরও বাড়ায় বার্সেলোনা। নিজেদের ডি বক্সের সামনে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের চ্যালেঞ্জের মুখে বল হারান লুকাস ভাসকেস। তরেসকে বল বাড়িয়ে ভেতেরে ঢুকে পড়েন রাফিনিয়া। বল ফিরে পেয়ে গতিময় শটে খুঁজে নেন জাল।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে বার্সেলোনার জালে বল পাঠান এমবাপে। তবে তিনিই অফসাইডে থাকা গোল মেলেনি।

একই তালে শুরু হওয়া দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩তম মিনিটে রেয়ালের জালে বল পাঠান ইয়ামাল। তবে তাকে বল দেওয়া রাফিনিয়া অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল।

তিন মিনিট পর একটুর জন‍্য ব‍্যবধান কমাতে পারেননি এমবাপে। তার শট বেরিয়ে যায় দূরের পোস্ট ঘেঁষে।

এরপর একটা ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। চোট পেয়ে মাঠে ছাড়েন পাউ কুবার্সি, তার জায়গায় নামেন আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন। মার্তিনের জায়গায় নামেন আলেহান্দ্রো বাল্দে। লম্বা সময় বাইরে থাকার পর এই ম‍্যাচ দিয়েই ফিরলেন বার্সেলোনার প্রথম পছন্দের লেফট ব‍্যাক।

৭০তম মিনিটে হ‍্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপে। ক্রিস্টেনসেনের পক্ষে দুই জনকে একই সঙ্গে পাহারায় রাখা সম্ভব ছিল না। তিনি ভিনিসিউসকে চ‍্যালেঞ্জ জানাতে যেতেই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড খুঁজে নেন এমবাপেকে। ঠাণ্ডা মাথায় ফরাসি ফরোয়ার্ড নিজের ও দলের তৃতীয় গোলটি করেন।

লা লিগার চলতি আসরে এটি এমবাপের ২৭তম গোল। রবের্ত লেভানদোভস্কিকে (২৫) পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই। অভিষেকে মৌসুমে রেয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের কীর্তিও গড়লেন এমবাপে (৩৯)। ছাড়িয়ে গেলেন চিলির ইবান সামোরানোকে (৩৭)।

তিন মিনিট পর ইয়ামালের শট ঠেকিয়ে ব‍্যবধান বাড়তে দেননি কোর্তোয়া। পরের মিনিটে বিস্ময়কর ব‍্যর্থতায় হ‍্যাটট্রিক পূরণ করতে পারেননি রাফিনিয়া। দূরের পোস্টে খুব কাছ থেকেও ইয়ামালের ক্রসে লক্ষ‍্যে থাকেনি তার ভলি।

৭৯তম মিনিটে ইয়ামালের শট ফেরান কোর্তোয়া। ফিরতি বলে তরেসের শট লাগে অহেলিয়া চুয়ামেনির হাতে। শরীর থেকে হাত বেশ দূরে থাকলেও হ‍্যান্ডবলের জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। মনিটরে রিপ্লে দেখেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি।

১০ মিনিট পর সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন ভিক্তর মুনিয়োস। খুব ভালো জায়গা থেকে শট লক্ষ‍্যে রাখতে পারেননি ভিনিসিউসের জায়গায় একটু আগেই মাঠে নামা এই তরুণ।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে নিজের ও দলের চতুর্থ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন এমবাপে। ঝাঁপিয়ে তার শট ব‍্যর্থ করে দেন স্ট‍্যান্সনি। কর্নার থেকে বল জালে পাঠান এমবাপে, তবে তিনিই অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল।

পঞ্চম মিনিটে গতিময় শটে জালে বল পাঠান বার্সেলোনার তরুণ মিডফিল্ডার ফের্মিন লোপেস। তবে আক্রমণের শুরুতে তার হাতে বল লাগায় মেলেনি গোল। এর একটু পরেই বাজে খেলা শেষের বাঁশি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads