বিয়েতে আগ্রহ সৃষ্টি করতে আইন সংশোধন চীনের

বিয়েতে আগ্রহ সৃষ্টি করতে আইন সংশোধন চীনের।
বিয়েতে আগ্রহ সৃষ্টি করতে আইন সংশোধন চীনের।

তরুণ-তরুণীদের বিয়েতে উৎসাহিত করতে নিবন্ধনের নিয়মসহ কাগজপত্রের জটিলতা কমিয়ে এনে আইন সংশোধন করেছে চীন।

সেইসঙ্গে যুগলরা তাদের সুবিধামত স্থানে বিয়ে নিবন্ধন করারও সুযোগ পাবে এ নিয়মে।

চীন ২০০৩ সালে প্রথম বিবাহ নিবন্ধন আইন পাশ করে; তারপর প্রথমবারের মতো আইনটিতে সংশোধন আনা হলো। যা ২০২৫ সালে ১লা মে থেকে কার্যকর হবে।

নতুন নিয়মে মূল ভূখণ্ডের যুগলদের নিজেদের পরিচয়পত্র, তাদের আগে বিয়ে নেই এমন ঘোষণাপত্র এবং গত তিন প্রজন্মে তাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই এমন নথির মাধ্যমেই নিবন্ধন করতে পারবে। আগে এসব নথির সঙ্গে পারিবারিক নিবন্ধন বইও দেখাতে হতো।

সংশোধিত আইন অনুসারে যুগলরা তাদের খুশিমত স্থানেও বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবে; পূর্বে যা শুধুই তাদের স্থায়ী আবাসের স্থানেই সীমাবদ্ধ ছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, এ পরিবর্তনের ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে; বিশেষ করে সেই সব তরুণদের জন্য তারা কাজের প্রয়োজনে তাদের নিবন্ধিত আবাস্থল থেকে দূরে বসবাস করে।

এমনই এক যুগল ইনার মঙ্গোলিয়ার ঝাং এবং শানডংয়ের ওয়াং। কাজের সূত্র ধরে দুজনেই বেশ কয়েক বছর ধরে জিয়াংসুতে বসবাস করছেন। তারা যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তখন কাগুজে নিয়মনীতি সম্পূর্ণ করতে ওয়াংয়ের শহরে যেতে হয় এবং এর জন্য তাদের দুই হাজার ইউয়ান খরচ এবং তিনদিনের ছুটিও প্রয়োজন হয়।

পুরনো নিয়মে অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে কেননা ২০২০ সালের জাতীয় শুমারি অনুসারে চীনের ৪৯৩ মিলিয়ন মানুষ নিজেদের নিবন্ধিত শহর থেকে দূরে বসবাস করে। আর এসব নাগরিকদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

আইন সংস্কারের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সম্প্রতি চীনে বিয়ের হার কমে যাওয়া। ছবি: সিনহুয়া’র সৌজন্যে।

আইন সংস্কারের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সম্প্রতি চীনে বিয়ের হার কমে যাওয়া। দেশটির বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৪ সালে চীনের ৬.১ মিলিয়ন যুগল বিয়ে নিবন্ধন করে; আগের বছরই যার সংখ্যা ছিল ৭.৬৮ মিলিয়ন।

তবে বিয়ের হার কমে যাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা বিয়ের উপযোগী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা কমে যাওয়া, সম্পর্ক বিষয়ে ধারণার পরিবর্তন এবং বিয়ের খরচকে দায়ী করছেন।

এছাড়া অনেক তরুণই মানসিক এবং আর্থিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য দেরিতে বিয়ে করছেন এবং ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের মতো যেখানে বিয়ের বাধ্যবাধকতা শিথিল তেমন জীবনধারায় ঝুঁকছে।

এসব প্রবণতার পরিবর্তন আনতে চীনের স্থানীয় সরকার নতুন দম্পতিদের জন্য নানা প্রণোদনা শুরু করেছে। পূর্বাঞ্চলের ঝেজিয়াং প্রদেশে বিয়ের সবেতন ছুটি বাড়িয়ে তিনদিন থেকে ১৩ দিন এবং শানসি প্রদেশের লিউলিয়ান শহরের ৩৫ বছরের আগে বিয়ে করলে তরুণীদের ১৫’ ইউয়ান প্রণোদনা দিচ্ছে।

বিশ্বের জনবহুল দেশের অন্যতম চীনে বয়স্ক নাগরিকের হার বেড়ে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা জন্মহার বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বিয়েকে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আর এর জন্যই সরকার একটি সহায়ক নীতিমালা চালু করেছে যার মধ্যে উন্নত প্রসবসেবা, শিশুযত্ন, শিক্ষা, আবাসন ও কর্মসংস্থানও রয়েছে।

আরও পড়ুন