পঁচাত্তরোর্ধ্ব কাউকে প্রধান উপদেষ্টা নয়, কমিশনের প্রস্তাব

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন।

পঁচাশি ঊর্ধ্ব মুহাম্মদ ইউনূসের গঠন করে দেওয়া ঐকমত্য কমিশন, প্রধান উপদেষ্টার যে বয়সসীমা প্রস্তাব করেছেন তা বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রধানের বয়সের চেয়েও দশ কম।

পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধির ওপর বাছাইয়ের ভার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।

রোববার দলগুলোর কাছে লিখিতভাবে এই খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে মঙ্গলবার কমিশন তাদের অবস্থান জানাবে।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৫তম দিনের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।

কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনার শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে একটি সমন্বিত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়, যা নিয়ে বেলা ২টার পর পর্যন্ত আলোচনা চলে। দুপুরের বিরতির পর কমিশন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দলগুলোকে লিখিত আকারে ওই প্রস্তাব দেয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কমিশনের দেওয়া সমন্বিত প্রস্তাবে বিদ্যমান সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। মেয়াদ শেষ বা অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। তবে দৈবদুর্বিপাকের কারণে সম্ভব না হলে আরও সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে ওই সরকার।

সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদের মেয়াদ শেষের ১৫ দিন আগে কিংবা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারবেন না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, মেয়াদে শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। এই কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন একজন করে ব্যক্তির নাম নেবে। প্রস্তাবিত নাম নিয়ে বাছাই কমিটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নির্ধারিত করতে পারবে এবং রাষ্ট্রপতি তাকে নিযুক্ত করবেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শনিবারের সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা অংশ নেন। ফাইল ছবি।

বাছাই কমিটি গঠনের পাঁচ দিনের (১২০ ঘণ্টা) মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে না পারলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য সংসদের সরকারি দল/জোট, প্রধান বিরোধী দল/জোট ৩ জন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল ২ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে।

পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার বৈঠক করে সরকারি দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হতে একজনকে, একইভাবে বিরোধী দল বা জোট একজনকে বাছাই করবে। তৃতীয় বৃহত্তম দল সরকারি দল/জোট, বিরোধী দল/জোট প্রস্তাবিত তালিকা হতে আলাদা আলাদা দুজনকে বাছাই করবে। বাছাই করার ব্যক্তিদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হবেন। তা না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটির সদস্যরা র‌্যাংঙ্কড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। সংসদ বহাল অবস্থায় তিনি শপথ নিতে পারবেন না।

নিয়োগ লাভের পরে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটির পরামর্শে অনধিক ১৫ ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পদের জন্য বাছাই করবেন।

বৈঠক শেষে আলী রীয়াজ বলেন, প্রস্তাবটিতে বিস্তারিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং এই প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে।

এই খসড়া প্রস্তাবের ভাষাগত ও খুঁটিনাটি দিক পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সোমবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচার পর প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা এর আগেও এ বিষয়ে দলীয় অবস্থান যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছেন। সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদনেতাকেই মূলত প্রধানমন্ত্রী করা হয়। তবে সব সময় সেটা হয় না। দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অযোগ্য হবেন, এটা গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিসের সঙ্গে যায় না।

একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদনেতা হতে কোনো অসুবিধা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন। এখানে দুজন হলে কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে।

তবে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি যাতে না হন, তার প্রস্তাব দেন তিনি।

আরও পড়ুন