পরীমনিকে গ্রেপ্তার করতে বলল আদালত

পরীমনি। ছবি: পরীমনির ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া।
পরীমনি। ছবি: পরীমনির ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন পরীমনি, তার একদিন না পেরোতেই পেলেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে পুরোনো একটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে।

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত রোববার এই আদেশ দিয়েছে।

একই মামলায় পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছন পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত।

তিনি জানান, নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মারধর ও হত্যার হুমকির মামলায় রোববার অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানিতে সময় আবেদন করা হলেও তা আবেদন নাকচ করে পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। পাশাপাশি আদালতে হাজির না থাকায় জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবরের প্রতিক্রিয়ায় পরীমনি বলেছেন, অন্যায় নিয়ে কথা বলার কারণে যদি তাকে বারবার জেলে যেতে হয়, তাতেও তার আপত্তি নেই।

“কিছু হলেই জেলে পাঠাবে, তাহলে তো দেশের কেউ কথাই বলবে না। সবাই বোবা হয়ে থাকবে? আমৃত্যু আমি অন্যায় দেখলে কথা বলব, যা আছে কপালে।”

গত বছরের ১৮ এপ্রিল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের দায়ের করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেয় ঢাকার সিজেএম আদালত। একই সঙ্গে পরীমনিকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারির আদেশ আসে সেদিন।

মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ৮ জুন পরীমনি ও তার সহযোগীরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে ক্লাব ত্যাগ করার সময় পরীমনি তাকে ডাক দেন। পরে একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে পরীমনি হত্যাচেষ্টার জন্য একটি গ্লাস ছুড়ে মারেন, যা তার মাথায় ও বুকে লাগে।

মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের এপ্রিলে পরীমনি ও ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে সিজেএম আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই।

এদিকে ২০২১ সালের ৮ জুন সাভারের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে পরীমনি ব্যবসায়ী নাসিরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেছিলেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। মামলায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ তিন আসামির বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৮ মে অভিযোগ গঠন করেন।

পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত জানিয়েছেন, এই মামলা ছাড়াও পরীমনির বিরুদ্ধে করা আরেকটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ওই মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এ।

রোববার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবরে প্রথম আলোকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরীমনি।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল টাঙ্গাইলে একটি অনুষ্ঠানে যেতে না পারা নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছেন কিনা তিনি।

জবাবে পরীমনি বলেন, “এসব নিয়ে আমি কিছুই ভাবতে চাই না। আমার কোনো কিছুতে সমস্যা মনে হলে আমি কথা বলবই। আমার গায়ে লাগলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। সবার মতো আমি চুপ করে থাকতে পারি না। যেকোনো অন্যায় নিয়ে আমি কথা বলছি।

“এই অন্যায় নিয়ে কথা বলার কারণে আমাকে যদি বারবার জেলে যেতে হয়, আমি গেলাম। আর কী করব। কিছু হলেই জেলে পাঠাবে, তাহলে তো দেশের কেউ কথাই বলবে না। সবাই বোবা হয়ে থাকবে? আমৃত্যু আমি অন্যায় দেখলে কথা বলব, যা আছে কপালে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads