‘মবের উসকানিদাতা’ আখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণের দাবি উঠেছে।
সোমবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ‘।
নারীর ওপর আক্রমণের ঘটনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে জাস্টিফাই করার অভিযোগ এনেছে সংগঠনটি।
গত শনিবার লালমাটিয়া বি ব্লক এলাকায় মব তৈরি করে দুই নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে “ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ” নামের সংগঠন ।
লালমাটিয়া এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় সমাবেশ করা হয়। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কুশপুতুল দাহ করা হয়।
এ সময় জ্বালো ‘রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘মবের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালাও এক সাথে’, ‘অবিলম্বে জাহাঙ্গীরকে, পদত্যাগ করতে হবে’, ‘বাধা আসবে যেখানে, লড়াই হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নারীরা।
অনেকের হাতে ‘স্লাটশেমিং বন্ধ করতে হবে’, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি, নিপীড়কের রাজনীতি’, ‘আমার দেশ, আমার রাস্তা, আমার অধিকার’, ‘নারীর বেলায় আইন দেখায়, পুরুষের বেলায় আইন কোথায়?’ ইত্যাদি স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সমাবেশে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মবের উসকানিদাতায় পরিণত হয়েছেন।”
“নির্যাতনের শিকার নারীরা যা করেছেন তা অপরাধ হলে সর্বোচ্চ সিভিল অফেন্স হয়। কিন্তু তাদের শারীরিক নির্যাতন করার ঘটনা একটি ক্রিমিনাল অফেন্স। একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কীভাবে একটা ক্রিমিনাল অফেন্সকে জাস্টিফাই করেন?” প্রশ্ন রাখেন ওই শিক্ষার্থী।
শনিবার লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে ধূমপান করার অভিযোত তুলে দুই নারীকে মারধর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ধূমপান করার অভিযোগ তুলে দুই নারীর উদ্দেশে অশালীন ভাষায় চিৎকার করেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এসময় নারীর চুল ধরে মারধর করা হয় । পথচারীদের মধ্যে দুজন নারীদের সাহায্যের চেষ্টা করলে জড়ো হওয়া জনতার একটি অংশ তাদেরও মারধর করে।
ভুক্তভোগীদের এক বন্ধুর ফেসবুক পোস্টে বলেন, “১০-১২ জন পুরুষ তাদের চড় ও ঘুষি মারে এবং সেই দৃশ্য ভিডিও করে।”
ভুক্তভোগীদের এক বন্ধু বলেন, “আমরা ৯৯৯-এ ফোন করি। এরপর পুলিশ আসে… কিন্তু তাদের উপস্থিতিতেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মবের আক্রমণের মুখে পুলিশ আমাদের হেফাজতে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে যায়।”
তেজগাঁও বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মো. ইবনে মিজান সাংবাদিকদের জানান, “ধূমপানকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে যায়। পরে দুই নারীকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।”
দুই নারীকে মারধরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি যতটুকু জেনেছি তারা নাকি সিগারেট খাচ্ছিল, কিছু লোক সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। তারা বাধা দেওয়ায়, তাদের ওপর চা ছুড়ে মেরেছিল।”
“পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, কেউ যেন উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান না করে।” বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।