ডাক্তারির সনদ নিয়ে গৃহকর্মী হিসেবে আমিরাতে, লজ্জায় মাথা হেঁট: ইউনূস

ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ দুর্নীতির অনেক গভীরে ঢুকে গেছে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দুর্নীতি থেকে বের হতে না পারলে বাংলাদেশের কোনো গতি নেই।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক আরব আমিরাত সফরে হওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আরব আমিরাতের লোক আমাদের দুর্নীতি নিয়ে বলছে, আমরা তোমাদের কোনো ডকুমেন্ট বিশ্বাস করতে পারছি না। এত ভুয়া!

“গৃহকাজের লোক, কিন্তু সে সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে মেডিকেল ডক্টর হিসেবে। জলজ্যান্ত আমরা দেখছি এ ডাক্তার হতে পারে না। সে ডাক্তার না, কিন্তু সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে। ডাক্তারে সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি নিয়ে ওখানে আসছে। আমরা কতটা বাছাই করবো। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় যে, আমরা এটা কিছুই করতে পারছি না। আমরা কেউ না কেউ তাকে এই সার্টিফিকেট দিচ্ছি। এজেন্টরা জোগাড় করে দেয়, শুধু একটা এজেন্ট না বহু এজেন্ট আছে।”

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এভাবে আমাদের বহু মেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে গিয়ে কিসের মধ্যে ফেলে দিয়েছে কেউ জানেও না। মানব পাচারের যে বিষয় তা অত্যন্ত বীভৎস। আমাদের মেয়েরা যাচ্ছে, কি অবস্থায় ফিরে আসছে, যদি সশরীরে ফিরে আসতে পারে। কত লাশ কোথায় চলে যাচ্ছে সেটারও কোনো হিসাব নেই। এই কোন দেশ বানালাম আমরা। আমরা তো দায়ী।”

দুর্নীতি আমাদের সব শেষ করে দিচ্ছে– মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সামনে বিশাল সম্ভাবনাময় জগৎ, শুধু আমাদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচিগুলো ঠিক করার অপেক্ষা। তারুণ্য আমাদের আছে, প্রাকৃতিক সুযোগ আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি, এই একটা জিনিস সব শেষ করে দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “যে কোনো সমীক্ষায় আপনারা দেখবেন, বাংলাদেশ দুর্নীতির তালিকায় সর্বনিম্নে। সততা বলে আমাদের আর কোনো জিনিস নেই, শৃঙ্খলা বলে আমাদের আর কোনো জিনিস নেই। কাজেই এই দুর্নীতি থেকে বের না হলে আমরা ভালো কিছু করতে পারব না।”

বাসস জানিয়েছে, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা আজকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সম্মেলনে এসেছি। কাজেই দুর্নীতি কোথায় আছে, কীভাবে আছে। তাদের কাছে এটা অজানা নয়। এটা থেকে উদ্ধার পাওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গতি নাই। এটা থেকে বের হতেই হবে আমাদের।”

দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমরা অল্প সময়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আছি, কতটুকু সমাধান দিতে পারবো জানি না। তবে শুরু থেকে আমরা একটা চেষ্টা করছি। সবাইকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায় আমরা দুর্নীতি মুক্ত হই। কারণ দুর্নীতি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই চলছে না। তারাও চায় আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য হোক, এটা তাদের গবেষণা। আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ব্যক্তিগত সুযোগ নিয়ে ব্যস্ত আছি। জাতীয় সুযোগের জন্য আমরা মোটেই চিন্তিত নই। আমাদের সেই চিন্তা বদলে ফেলতে হবে।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দুর্নীতি থেকে বিভিন্ন দেশ বের হয়ে এসছে, এটা সম্ভব, অসম্ভব কিছু না। শুধু চেষ্টার দরকার। শুধু আমাদের প্রতিজ্ঞা দরকার, এটা আমরা করবো। সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যদি দুর্নীতি মুক্ত হতে পারে। তাহলে আমরা কেন পারব না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরাও পারব।”

দুর্নীতি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব জায়গাগুলোতে অনলাইন ব্যবস্থা আছে সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে।

তিনি বলেন, “এটা (দুর্নীতি) থেকে মুক্ত হতে না পারলে কোনো দিকে অগ্রসর হওয়ার উপায় নেই। আমরা আজকে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা এই ঘা থেকে মুক্ত হবো, সুস্থ হবো, দুর্নীতির দায়ে আমাদের কেউ অভিযুক্ত করতে পারবে না। এই রকম সরকার চালাব, এ রকম সমাজ চালাব।”

আরও পড়ুন