আশঙ্কাই সত্য হলো, মুক্তি মিলছে না চিন্ময় কৃষ্ণের, আরও ৪ মামলায় গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।

হিন্দু নেতাদের আশঙ্কাই সত্য হলো। সহজে মুক্তি মিলছে না সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর। আরও চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের আদালত।

চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ মঙ্গলবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতার হুমকির পর জামিন না হওয়ার এমন সংশয় প্রকট হয়েছিল সংখ্যালঘু নেতাদের মনে।

খোদ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেছিলেন, অবস্থাদৃষ্টে তাদের কাছে মনে হচ্ছে জামিনের বিষয়ে আদালতের খুব বেশি কিছু করার নেই।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ বলেন, গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনায় পুলিশের করা তিনটি মামলায় এবং আইনজীবী আলিফের ভাইয়ের করা একটি মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

“শুনানি শেষে আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন।”

‘আসামির নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ চিন্ময়কে এদিন জেলখানা থেকে ভার্চুয়ালি শুনানিতে যুক্ত করা হয় বলে জানান সহকারী পিপি।

এর আগে সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয় আদালত।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন।

আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।

সহিংসতার ওই ঘটনায় সেদিন রাতেই তিনটি মামলা করে পুলিশ। আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতোয়ালি মোড়ে তিন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়।

আইনজীবী আলিফকে হত্যার ঘটনায় ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫/১৬ জনকে আসামি করা হয়।

সেদিন আইনজীবীদের ওপর হামলা, বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন আলিফের ভাই খানে আলম, যেখানে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়।

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

গত বুধবার ওই মামলায় তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। কিন্তু জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে তার মুক্তি আটকে যায়।

হাই কোর্টে চিন্ময় দাসের জামিন পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে ফেইসবুক থেকে সড়কে। জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়ে চিন্ময়ের জামিন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, “চিন্ময়ের ঘটনার শুরু থেকেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ এ দেশের ওপর অন্যায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। চিন্ময়ের জামিনও কি সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই দেওয়া হলো?”

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘সাবধান’ করে বলেন, “ইন্টেরিম সাবধান! আলিফের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের রাস্তা উন্মুক্ত করলে পরিণতি ভালো হবে না।”

হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ট্যাটাস দেওয়ার পরের দিন শুক্রবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন বাতিল ও আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।

সমাবেশে তারা বলেন, “আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল করে তার বিচার করতে হবে। অন্যথায় আমরা আবার রাজপথে নামব।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের একজন নেতা বলেছিলেন, “জামিন ঠেকাতে এবার হাসনাত আব্দুল্লাহ মাঠে নেমেছেন। আন্দোলন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তারা যেটা বলবে সেটাই হবে। আদালতের খুব বেশি কিছু করার নেই বলে মনে করি। সরকার যদি না চায় তাহলে চিন্ময় দাসের জামিন হবে না।”

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদদের সাবেক সহ-সভাপতি বলেন, “সারাদিন এতো পতাকা অবমাননা হচ্ছে, ফিলিস্তিনির পতাকার নিচে বাংলাদেশের পতাকা লাগানো হচ্ছে, পতাকার উপর নামাজ পড়া হচ্ছে- তখন পতাকা অবমাননা হয় না। কারণ যারা এই কাজটি করছে তারা সংখ্যাগুরু। তাদের অপরাধ আসলে অপরাধ নয়। সব দোষ শুধু সংখ্যালঘুদের।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads