ফিনল্যান্ডে শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস ও স্ক্রিনের যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে একটি জাতীয় জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে, যেখানে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সোশাল মিডিয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধের প্রস্তার রাখা হয়েছে।
দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার (টিএইচএল) এবং ন্যাশনাল বোর্ড অব এডুকেশন যৌথভাবে এই সুপারিশ প্রণয়ন করেছে।
মূলত শূন্য থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের অবসর সময়ে ডিজিটাল ডিভাইস ও কনটেন্ট ব্যবহারের বিষয়ে বাস্তবধর্মী নির্দেশনা প্রণয়নে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
আগামী বছর ১৮ বছরের নিচের শিশু ও কিশোরদের জন্যও একই ধরনের একটি সুপারিশ প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য শিশু ও কিশোরদের সুস্থতা ও শেখার পরিবেশ উন্নত করা একইসঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া।
ফিনল্যান্ডের ন্যাশনাল বোর্ড অব এডুকেশনের শিক্ষা পরামর্শক লাওরা ফ্রাঙ্কের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হলো, স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে শিশুদের দূরে রাখা, শিশুরা কোন কনটেন্ট দেখছে তা খেয়াল রাখা, এবং যুক্তিসঙ্গত স্ক্রিন টাইম নিশ্চিত করা।
টিএইচএলের সাম্প্রতিক স্কুল হেলথ জরিপ অনুযায়ী, অনেক তরুণই ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি।
নতুন সুপারিশ অনুযায়ী, শিশুদের বয়স অনুযায়ী কনটেন্ট অবশ্যই উপযুক্ত ও নিরাপদ হতে হবে। অশ্লীল ভাষা, মাদকাসক্তি, যৌনতা বা সহিংসতার মতো ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে শিশুদের দূরে রাখা জরুরি।
এই নির্দেশিকাগুলোর উদ্দেশ্য শুধু অভিভাবক নয়, বরং পুরো সমাজকে ডিজিটাল সহায়তায় সম্পৃক্ত করা।
এই প্রস্তাবগুলো আপাতত মন্তব্যের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যাতে বিভিন্ন পক্ষ তাদের মতামত জানাতে পারে।
প্রস্তাবে যৌক্তিক সীমায় ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহারে কিছুটা নমনীয়তা রাখা হয়েছে। যেমন, পুরো পরিবার একসাথে মাঝে মাঝে কোনো সিনেমা দেখা যেতে পারে।
“অবশ্যই প্রতিটি পরিবার নিজের সিদ্ধান্ত নেবে, কিন্তু এই সুপারিশগুলো পরিবারগুলোর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে,” যোগ করেন লাওরা ফ্রাঙ্কে।
কখন এবং কেমন ফোন শিশুদের জন্য উপযুক্ত তা নিয়ে দেশটিতে বেশ জোরেশোরে আলোচনা চলছিল। এর মধ্যেই এমন নির্দেশনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

বর্তমানে অনেক পরিবার স্কুলে ভর্তি হওয়া শিশুদের হাতে স্মার্টফোনের পরিবর্তে সাধারণ ফোন দিচ্ছে, যা নতুন নির্দেশিকায়ও বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজস্ব ডিভাইস কেনায় যতটা সম্ভব দেরি করা উচিত। যদি কিনেই ফেলে, সেক্ষেত্রে শিশুটি কী কনটেন্ট ব্যবহার করছে ও কতক্ষণ স্ক্রিনে সময় দিচ্ছে, সে বিষয়ে নজর রাখা প্রয়োজন।
ফ্রাঙ্কের মতে, ডিজিটাল দক্ষতা আজকের যুগে গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছোট শিশুর নিজের ডিভাইস না থাকলেও এই দক্ষতা অর্জন সম্ভব।
নতুন নির্দেশনায় অভিভাবকদের দায়িত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তাদের উচিত শিশুদের সঙ্গে ডিজিটাল কনটেন্ট নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা, পারিবারিকভাবে কিছু নিয়ম নির্ধারণ করা, এবং সপ্তাহে অন্তত কয়েকদিন সম্পূর্ণ স্ক্রিনমুক্ত সময় নিশ্চিত করা।
“অভিভাবকরা নিজের আচরণের মাধ্যমেই সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় উদাহরণ,” বলছিলেন টিএইচএলের পাইভি লিন্ডবার্গ।
“এই জাতীয় ডিজিটাল নির্দেশিকা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সামঞ্জস্য বা ভারসাম্যই সুস্থ জীবনের মূলভিত্তি।”
স্ক্রিন টাইমের পাশাপাশি শিশুদের জন্য খেলাধুলা, পারস্পরিক যোগাযোগ, নিয়মিত আহার ও পর্যাপ্ত ঘুম সমানভাবে জরুরি।
বিভিন্ন পর্যায়ের ১৬০ জন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই সুপারিশমালা তৈরি করেছে।