মাইকে ঘোষণা দিয়ে সুনামগঞ্জের বিল থেকে ৪ কোটি টাকার মাছ লুট

গত ৫ দিনে দুই উপজেলার অন্তত ৮টি বিলের মাছ লুট করা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিলে নেমে মাছ লুট করে।

সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে বিল মাছ লুট করা হচ্ছে। গত ৫ দিনে এই দুই উপজেলার অন্তত ৮টি বিলের মাছ লুট করা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিলে নেমে মাছ লুট করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ইজারাদারদের দাবি, এই বিলগুলো থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকার মাছ লুট করে নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকালে দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ১০-১৫টি গ্রামের প্রায় ৮-১০ হাজার লোক মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে কাশীপুর শতোয়া বিলে নেমে পড়ে। তারা ইচ্ছেমতো মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এসময় বিলের পাড়ে ৮-১০ জন পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

একই দিনে উপজেলার কাশীপুর গ্রামের কাছের বাইল্লা বিল ও ইয়ারাবাদ গ্রামের ভাটিগাং বিলেও মাছ লুট করা হয়।

শতোয়া বিলের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, “এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। গণহারে লুটপাট চলছে। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও এলাকার ১০-১৫ হাজার মানুষ দুই দিনে আমাদের জলমহালের কোটি টাকার বেশি মাছ লুটে নিয়ে গেছে।’

এই লুটপাট শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে। সেদিন দিরাই উপজেলার চরনারচর গ্রামের পাশের কামান-কচমা বিলে জোর করে মাছ ধরে নেয় ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষ। পরদিন শনিবার আবারও ৮-১০ হাজার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে করে এসে এই বিলে লুটপাট চালায়।

এরপর থেকে প্রতিদিনই চলছে লুটপাট। কামান-কচমা, শতোয়া, বাইল্লা, ভাটিগাং বিল ছাড়াও এ পর্যন্ত লুট করা হয় শাল্লার জোয়ারিয়া বিল, দিরাইয়ের আতনি বিল, লাইড়া-দিঘা ও চইনপট্টা বিলের মাছ।

দিরাইয়ের কামান-কচমা বিলের ইজারাদার চরনারচর বি. এম. মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সুধীর বিশ্বাস বলেন, “আমরা সরকারকে প্রতি বছর ৫০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব দেই। দুই দিনে আমাদের বিলের প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে। ১৫-২০ কেজি ওজনের বোয়াল ও আইড় মাছ গাড়ি ভরে নিয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “পুলিশের সামনেই জোর করে মাছ নিয়ে গেছে। পুলিশের কিছু করার ছিল না, কারণ পুলিশ ছিল ১০ জন, মাছ ধরতে এসেছিল ৮-১০ হাজার মানুষ।”

স্থানীয় লোকজন ও বিলের ইজারাদার জানিয়েছেন, দিরাই-শাল্লা উপজেলার শ্যামারচর, ললোয়ারচর, মাইতি, কার্তিকপুর, নোয়াগাঁও, চিকাডুপি, বল্লভপুর, উজানগাঁও, সোনাকানি, নিজগাঁও, মির্জাপুর, রাহুতলা, শরীফপুর, কাশীপুরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন দিরাই-শাল্লার কামান ও লাইড়া দীঘা জলমহালের মাছ লুটে জড়িত।

লুটপাটে আপত্তি জানানোয় শাল্লার আটগাঁও গ্রামের রনি বিল্লালের বসতঘর ও অটোরিকশা ভাঙচুর করে লুটপাটকারীরা। এছাড়া তার ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রনি বিল্লাল।

তবে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “কয়েকটি বিলের মাছ লুটের অভিযোগ পেয়েছি। লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ব্যাপারে জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “দিরাইয়ের একটি জলমহাল থেকে জোর করে মাছ ধরে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়াও আর কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads