ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের অস্বীকৃতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার অনেক কারণের একটি বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরটি ইন্টারন্যাশনালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎতকারে তিনি এমনটি বলেছেন।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার একাধিক সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর এবার সামনে এল সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎকার যেটি সোমবার আরটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারে নওফেল বলেন, ২০২৪ সালে যে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় সেটি ছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এবং ক্লিনটন পরিবারের দ্বারা প্ররোচিত।
সাবেক মন্ত্রী দাবি করেন, শেখ হাসিনার পতনের দিকে নিয়ে যাওয়া বিক্ষোভগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না; বরং সেগুলো ছিল “সুপরিকল্পিত ও অর্থায়িত।”
তার ভাষায়, “ক্লিনটন পরিবার ও অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের মধ্যে বহু পুরনো সম্পর্ক রয়েছে। এই কর্মকাণ্ড অনেক দিন ধরেই চলছিল। প্রকাশ্যে নয়, গোপন এনজিওগুলোর মাধ্যমে তহবিল সরবরাহ করা হচ্ছিল। তারা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য মরিয়া ছিল।”
তিনি ইউএসএআইডির অর্থ ব্যবহারের বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন।
“আইআরআই সক্রিয় ছিল, ইউএসএআইডির অর্থের কোনো সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ছিল না। সেই টাকা কোথায় গেল? তা ছিল সরকার পরিবর্তনের কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য,” অভিযোগ করেন নওফেল চৌধুরী।
“এই অর্থ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়, আর সেই বিশৃঙ্খলাকেই পরিণত করা হয় বড় ধরনের দাঙ্গায়।”
শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ওয়াশিংটনের বৈরী সম্পর্কের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সময় বাংলাদেশের অবস্থানই ছিল মূল বিষয়।”

সাবেক মন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল, এবং বাংলাদেশ যেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয় সে বিষয়ে প্রবল কূটনৈতিক চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের অবস্থান ছিল, আমরা ভোটদানে বিরত থাকব।
“দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ ‘অন্ধভাবে’ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল, কিন্তু বাংলাদেশকে সাবধানতার সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “রাশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের বন্ধু, তারা বাংলাদেশে গম, খাদ্যপণ্য ও সার সরবরাহ করে থাকে।”
নওফেলের মতে, বেশ কিছু শক্তিধর দেশের উস্কানির ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গ্লোবাল সাউথের মানুষই।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, শেখ হাসিনার সরকার শান্তির আহ্বান জানিয়েছিল এবং স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল যে এই যুদ্ধ উন্মত্ততা পৃথিবীকে একটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
“বাংলাদেশের এই অবস্থান কিছু দেশের পছন্দ হয়নি,” যোগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমানে প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম নওফেল।
২০২২ ও ২০২৩ সালে ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তবে সেসব প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ।
সেসময় ঢাকাস্থ রুশ দূতাবাস বাংলাদেশের এই অবস্থানের জন্য তৎকালীন সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও ব্যক্ত করেন তিনি।
বিভিন্ন বিষয়ে নওফেলের মন্তব্যগুলো এসেছে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছাড়ার এক বছরেরও বেশি সময় পর। কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সারাদেশে সহিংসতায় রূপ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের হিসাব অনুযায়ী, সেই অস্থিরতায় ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়া শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে ঢোকার আগমুহূর্তে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পরে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
আরটি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগী হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ভারত থেকে দূরে সরে গেছে।



