আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের নয় মাসের মাথায় চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ওই ঘটনা নিয়ে উত্তাপের মধ্যে আন্দোলনের মুখে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও এবার খবর এলো আবদুল হামিদ দেশে ফিরেছেন।
রোববার দিবাগত রাত দেড়টায় থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে (টিজি-৩৩৯) সাবেক রাষ্ট্রপতি ঢাকায় নামেন। হুইল চেয়ারে বসে থাকা আবদুল হামিদের পরনে ছিল শার্ট ও লুঙ্গি, মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক।
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশে ফেরার খবরটি নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ।
বিমানবন্দরে পৌঁছে রাত পৌনে ২টার দিকে তিনি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যান। তাকে সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পুরো সময়টি তিনি হুইল চেয়ারিই বসে ছিলেন।
গত ৭ মে দিবাগত রাত ৩টায় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে তার দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেসময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
অবশ্য দুই দফা রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল না।

ওই ঘটনার রেশ ধরে বিদেশে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করা নুসরাত ফারিয়াকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অসুস্থ আব্দুল হামিদকেও আসামি করা হয়।
তার দেশ ছাড়ার পর বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। পরবর্তীতে তাদের আন্দোলনের মুখে তড়িঘড়ি করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, স্থগিত করা হয় দলটির নিবন্ধন।
যার ফলে কার্যত নির্বাচন করার যোগ্যতা হারায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দেশের সবচেয়ে পুরনো দলটি। এছাড়া দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
এসব ঘটনার মধ্যেই ১৫ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন আবদুল হামিদের ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার।
তিনি লেখেন, “৮২-৮৩ বৎসরের একজন বয়স্ক লোক যিনি কিনা অসুস্থতার কারণে এখন ২ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না, ২ ঘণ্টা বসে থাকতে পারছেন না বাধ্য হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন। ওজন কমতে কমতে এখন ৫৪ কেজি। যে কারণে নিজের কোনো প্যান্ট পরতে পারছেন না বাধ্য হয়েই লুঙ্গি পড়ে থাকতে হচ্ছে। তাকে বেটার চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা বোর্ড করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিদেশে চিকিৎসা করানোর জন্য।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রকাশ্যে বলেছেন যে উনি আর পলিটিক্সের সঙ্গে জড়িত হবেন না এবং তারপর পলিটিক্সের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত হননি। আবার যেখানে শত শত লোক বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে নিয়মিত থাইল্যান্ড যাচ্ছে সেখানে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য তিনি আসতেই পারেন।”
ওই স্ট্যাটাসে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। “সকলেই দোয়া করবেন যেন তিনি সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসতে পারেন ইনশাআল্লাহ।”