মুক্তিযোদ্ধা বনাম জুলাইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত: ভারসাম্যের রাজনীতি বরাদ্দে?

মুক্তিযুদ্ধ বনাম জুলাই আন্দোলন।
মুক্তিযুদ্ধ বনাম জুলাই আন্দোলন।

বাংলাদেশের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৭ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দের ৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে পরিচালন খাতে, অন্যদিকে উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩৩ কোটি টাকা।

এই বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও গবেষণা।

এদিকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের জন্য বরাদ্দের আওতায় শহীদ পরিবারকে এককালীন ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান, তিন শ্রেণির আহতদের জন্য শ্রেণিভিত্তিক মাসিক সম্মানী ভাতা, ঢাকায় ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা, পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান এবং নতুন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন।

মাত্র দশ মাস আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য রাখা কোটা বিলুপ্তের দাবিতে আন্দোলন নেমেছিল তরুণরা, যা পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

“কোটামুক্ত বাংলাদেশ” গড়ার অভিপ্রায়ে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও নতুন করে কোটা প্রথা চালুকে অনেকেই রাজনৈতিক দ্বিচারিতা হিসেবে দেখছেন। সোশাল মিডিয়ায় এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা চলমান।

এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট ছিল ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা।  

প্রতিকার না কি প্রতিস্থাপন?

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতেই বেশি মনযোগী। তারা সবাইকে সন্তষ্ট করার পথে হাঁটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক আমলা দ্য সান ২৪কে বলেন, “দেখুন, প্রথমত এই সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, তারা রুটিন দায়িত্বের বাহিরে কিছু করার এখতিয়ার রাখে না। তবে অবস্থদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রেখে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কিছুদিন আগেই তো আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় হওয়া একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের সমর্থক একটি শক্তিশালী পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে চেয়েছে বলেই প্রতিয়মান। অন্যদিকে আমরা কয়েকমাস আগেই দেখেছি একজন মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এখন আবার তাদের সন্তুষ্ট রাখতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের সমর্থনও তারা হারাতে চাচ্ছে না।”

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিংবা সুযোগ-সুবিধা কাউকে নীতিবিচ্যুতি বা বৈষম্যের দিকে যেন না ঠেলে দেয় সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান এই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন