রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় তল্লাশির নাম করে তছনছ-লুটপাট করেছে একদল মানুষ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলের বাসায় অবৈধ টাকা খোঁজার অজুহাতে তারা বাসাটিতে প্রবেশ করে। তবে বাড়িতে পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত কাউকেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলের গুলশান-২ এর শাহবুদ্দিন পার্কের পাশের বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকা লুকিয়ে রাখার গুজব ছড়িয়ে বাড়ি ঘেরাও করে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা নামে একদল মানুষ।
মুহূর্তেই বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে প্রবেশ করেন তারা। এরপর বাড়িটির পাঁচ তলার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তারা ভেতরে ঢুকে পড়েন। শুরু হয় লুটতরাজ, তছনছ করে খুঁজতে শুরু করেন টাকা। ভেঙে ফেলেন আলমারি, ওয়্যারড্রোব, লাগেজ থেকে শুরু করে সবকিছু।
জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় চালক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকারের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি জড়ো হয়ে দাবি করতে থাকেন, ওই বাড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের। সেখানে ‘বিপুল অস্ত্র ও অর্থ’ লুকিয়ে রাখা হয়েছে– এমন তথ্য পাওয়ার কথা বলে জোর করে ওই বাড়িতে ঢোকেন তারা।
লোকজনের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ার দৃশ্য ফেইসবুকে সরাসরি প্রচার করেছে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন। তাতে দেখা যায়, ’আওয়ামী লীগের দালাল’ স্লোগান দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়া লোকজন বাড়ির আলমারি, জুতার বাক্স, বিছানাপত্র সব ওলটপালট ও তছনছ করছে। এসময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সেখানে ঢুকে পড়া এক তরুণ নিজেকে শাকিল আহমেদ পরিচয় দিয়ে বলেন, তারা স্থানীয় বাসিন্দা। ওই বাড়িতে ‘তানভীর ইমামের মেয়ে’ আছে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে– এমন খবর তাদের কাছে ছিল। বাড়িতে অনেক ‘অবৈধ জিনিসপত্র’ রয়েছে বলেও খবর ছিল তাদের কাছে।
বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে লোকজন হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু লোকজন দরজার সিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাড়ি তছনছ করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, “এটা এইচ টি ইমামের বাড়ি নয়, এটা রহমান সাহেবের বাড়ি। রহমান সাহেবের মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে। ২০০১ সালের দিকে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রহমান সাহেব ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার মেয়ে এই বাড়িতে থাকেন।”
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ যায় সেখানে। রাত দেড়টার দিকে যান সেনা সদস্যরাও। ততক্ষণে ওই বাড়ির ভেতরে তল্লাশির নামে সবকিছু তছনছ করে ফেলা হয়।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান রাত ২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাড়ি। যার সঙ্গে ২০-২৫ বছর আগেই তানভীর ইমামের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে শুনেছি। বাড়িতে টাকা ও অস্ত্র আছে অভিযোগ করে আজকে ছাত্র পরিচয়ে কিছু মানুষ মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়ে। আমরা ধারণা করছি, এর সাথে কিছু অছাত্রও ছিল।”
পুলিশ ওই বাড়িতে যাওয়ার পর তারা আবার মিছিল করতে করতে বেরিয়ে যায় জানিয়ে পরিদর্শক মোখলেছুর বলেন, “বাড়ির সবকিছু তছনছ করে ফেলা হয়েছে। আমরা আসতে আসতেই তারা তছনছ করে ফেলেছে। এখন বাড়ির কিছু খোয়া গেছে কি না বা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নিশ্চিত হতে পারব।”
পরে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, “বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর লুকিয়ে আছে এবং বাসায় টাকা ও অস্ত্র মজুদ আছে- এমন অভিযোগ তুলে কিছু লোকজন বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে আমরা যাওয়ার পর তারাও নেমে যায়, সেনাবাহিনীর টিমও আসে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাসায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় কেয়ারটেকারসহ তিনজন ছিলেন বাসায়, বাসার মালিক ছিলেন না। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি।”
এ ঘটনায় জনতার মধ্যে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেও জানান তিনি।