বিসিএসে ‘বেছে বেছে’ হিন্দুদের বাদ দেওয়া হচ্ছে?

সামাজিক মাধ্যমে বাদ পড়াদের মন্তব্যে নানা প্রশ্ন, ক্ষোভ!
সামাজিক মাধ্যমে বাদ পড়াদের মন্তব্যে নানা প্রশ্ন, ক্ষোভ!

বিসিএসে নিয়োগের নতুন প্রজ্ঞাপনে সাধারণ ক্যাডারে যে ৫৬ জন বাদ পড়েছেন তাদের অর্ধেকই সনাতন ধর্মালম্বী। সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে প্রশাসন ক্যাডারে, যাদের ১৩ জনই হিন্দু। এনিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। বলছেন- ‘হিন্দু হওয়ার কারণেই বাদ পড়েছেন তারা’।

৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যাতে আগের তালিকায় থাকা ১৬৮ জন প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

কী কারণে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে বা কেনই বা আগের তালিকায় রাখা হয়েছিল সেবিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো ভাষ্য মেলেনি।

নতুন প্রজ্ঞাপনে সই রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নব-নিয়োগ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. উজ্জল হোসেনের। বাদ পড়াদের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সোমবার বলেন, “এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতনরা বলতে পারবেন।”

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্মকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের মন্তব্য উদ্ধার করতে পারেনি দ্য সান ২৪। তবে মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা জারি রয়েছে।

দ্য সান ২৪  বিশ্লেষণ করে দেখেছে সাধারণ ৮টি ক্যাডার থেকে বাদ পড়েছেন ৫৬ জন, যাদের ২৭ জনই সনাতন ধর্মালম্বী।  

সবচেয়ে বেশি বাদ দেওয়া হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারে, ২৬ জন, যাদের ১৩ জনই হিন্দু।

এরা হলেন- লক্ষণ চন্দ্র দাস, গোপা বিশ্বাস, বিশাল কুমার জাজোদিয়া, দিব্যন্দু সিংহ সপ্ত, সৈকত বিশ্বাস, প্রসেঞ্জিত দাস, দিপু রায়, শুভজিৎ সাহা, বিশাল আগারওয়ালা, ভূবন চন্দ্র হালদার, শুভ রায় সুমন, প্লাবন কুমার সাহা এবং সৌরভ কুমার মণ্ডলী।

পুলিশ ক্যাডারে বাদ পড়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে ২ জন সনাতনী প্রভাষ বিশ্বাস এবং কেশব দাস।

পররাষ্ট্র ক্যাডার থেকে বাদ পড়া ৫ জনের মধ্যে ২ জন সনাতনী, একজন শাওনী পাল টিনা, অপর জন সঞ্জয় দত্ত।

কর ক্যাডার থেকে বাদ পড়া ৭ জনের মধ্যে ৫ জনই হিন্দু। এরা হলেন-  পরেশ চন্দ্র পাল, রাজিব কান্তি দাস, তীর্থ দাস, নয়ন পুরকায়স্থ এবং অসীম চক্রবর্তী আদিত্য।

কাস্টমসে বাদ পড়েছেন ৩ জন। এরমধ্যে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী অপূর্ব সাহা।

সমবায়ে বাদ পড়েছেন ৩ জন। এরমধ্যে একজন হিন্দু। তিনি হলেন- হরেকৃষ্ণ বর্মন।

খাদ্য ক্যাডারে ৩ জনেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২ জনই হিন্দু। একজন বিদুর কুমার প্রাং এবং আরেক জন শ্যামল মল্লিক।

রেলওয়ে ক্যাডারে যে ১ জন বাদ পড়েছেন, তিনিও হিন্দু প্রদীপ্ত বণিক দীপ।

এদিকে বাদ পড়াদের অনেকেই তাদের ক্ষোভ, কষ্টের কথা উগড়ে দিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। এনিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা।

কর ক্যাডার থেকে বাদ পড়া রাজিব কান্তি দাস লিখেছেন, “ প্রথম গেজেটে নাম এলেও আজকের নতুন গেজেটে আমার নাম নেই। আমার মাকে কীভাবে বলি যে, মা তোমার ছেলের আর তোমাদের দেখা স্বপ্নের ইতি আজ টানা হলো।”

প্রশাসন ক্যাডার থেকে বাদ পড়া প্লাবন কুমার সাহা লিখেছেন, “এডমিন থেকে যতজন বাদ পড়েছে তার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি সনাতনী। আমি নিজে কখনই বিশ্বাস করি না যে, ধর্ম ও এই সব ব্যাপারে কাউকে ভেরিফাই করার একটা ক্রাইটেরিয়া হতে পারে। আমি বিশ্বাস করতেও চাই না, এটা হয়েছে।”

সৌমিত্র সমাদ্দার সৌম্য লিখেছেন, “এই রাতে কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। বাবা মা সবাই ভেঙে পড়েছে।  শুধুমাত্র গোপালগঞ্জ বাড়ি হওয়ার কারণে ৪৩ তম বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ দিয়ে দিলেন। জীবনটা নষ্ট করে দিলেন।”

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে, যাতে অংশ নিতে বিসিএসের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জনের জমা পড়েছিল।

কোভিড মহামারির মধ্যে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী অংশ নেন।

পরে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তাদের মধ্যে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন ২ হাজার ১৬৩ জন।

পরে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্যাডারে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ১৫ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন করে নিয়োগ দিয়েছিল। সোমবারের প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনসহ ৪৩তম বিসিএসে এ পর্যন্ত  বাদ পড়েছেন মোট ২৬৭ জন।

এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিবেদন:

বিসিএসের নিয়োগ তালিকায় ফের কাটছাঁট, বাদ ১৬৮

আরও পড়ুন