আর কয়েক দিন পর ইংরেজি নতুন বছর ২০২৫ বরণ করবে গোটা বিশ্ব। এর কয়েকদিন আগে উদযাপন করা হবে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- যিশুর জন্মের পর থেকেই নতুন সাল গণনা শুরু হলেও তার জন্মদিনের বদলে কেন ১ জানুয়ারিতে উদযাপন করা হয় বর্ষবরণ? মাঝে কেন এই কয়দিনের ব্যবধান?
খ্রিস্টের জন্মের ২ হাজারেরও বেশি বছর আগে বিশ্বের অনেকটা অংশে প্রচলিত ছিল ব্যাবিলনীয় ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা। ১০ মাসের এই ক্যালেন্ডারে নতুন বছর শুরু হতো মার্চ মাসে। বসন্তে প্রকৃতি যখন নতুন জীবনীশক্তি পেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠে, সেই সময়ে বর্ষবরণ করতেন তখনকার মানুষ।
তবে রোমান সাম্রাজ্যের প্রথমদিকে পালটে যায় এই ক্যালেন্ডার। গোটা বছরকে ভাগ করা হয় ১২ মাসে। নতুন ক্যালেন্ডারে যোগ হয় জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাস।
মনে করা হয়, রোমান দেবদেবীর নাম লানুয়ারিউস এবং ফেব্রুয়ারিউসের নাম অনুসারে নতুন দুই মাসের নাম রাখা হয়েছিল। তবে দুটি মাস যোগ হলেও নতুন বছর গণনা হতো মার্চ থেকেই।
জানুয়ারি মাস থেকে নতুন বছর শুরুর প্রচলন চালু হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময়কালে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে গোটা রোম সাম্রাজ্যজুড়ে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করার পরিকল্পনা করেন সিজার। সেই মতো খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সাল থেকে শুরু হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। জানুয়ারি মাস থেকে নতুন বছর, সেই হিসাবেই ১২ মাসের ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্য ছাড়াও আরও বহু জায়গায় অনেকদিন ধরে প্রচলিত ছিল এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।
ব্যাবিলনীয় ক্যালেন্ডারে বছর ছিল ১০ মাসে, তখন সন গণনা শুরু হতো মার্চে। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথমদিকে পালটে যায় এই ক্যালেন্ডার। গোটা বছরকে ভাগ করা হয় ১২ মাসে। নতুন ক্যালেন্ডারে যোগ হয় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি নামে দুটি নতুন মাস।
অবশ্য রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে চিত্র। খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ বছর পরে দিউনিসিয়স এক্সিগুস নামে এক ধর্মপ্রচারক পরিকল্পনা করেন, সাল গণনা শুরু হোক খ্রিস্টের জন্মের সময়কালের নিরিখে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত? দিউনিসিয়সের মত ছিল, যিশু খ্রিস্টের জন্ম গোটা বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসকে দু’ভাগে ভাগ করে দেয় জগতে তার আবির্ভাব। তাই খ্রিস্টের জন্মের পর থেকে শুরু হোক নতুন এক অধ্যায়, যার নাম হবে খ্রিস্টাব্দ। যিশুর জন্মের আগের সময়কালকে খ্রিস্টপূর্বাব্দ হিসাবে অভিহিত করা হোক। ৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দিউনিসিয়সের এই পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয় পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে। অর্থাৎ ৯০০ বছর পরে এসে ঠিক হয় যে যিশুর জন্মকে ১ সাল হিসাবে ধরা হবে। আজও সেই নিয়ম মেনে চলে গোটা দুনিয়া।
খ্রিস্টের জন্মের ২০২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষেই উদযাপিত হবে ২০২৫ সালের নতুন বছর, যা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ হিসাবে।
সেখানেই প্রশ্ন ওঠে, যিশুর জন্মের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যদি নতুন বছর পালিত হয়, তাহলে তার জন্মদিনেই বর্ষবরণ নয় কেন?
নেপথ্যে রয়েছে নানা কারণ। মতান্তরে বলা হয়, প্রাচীন ইহুদি সমাজে পুত্রসন্তান জন্মালে তার খৎনা করানোর রীতি ছিলো। সেটা করতে হতো জন্মের অষ্টম দিনে। খৎনার পরই ওই পুত্রসন্তানের নাম রাখা হতো আনুষ্ঠানিকভাবে।
সেই একই নিয়ম পালন করা হয়েছিল যিশুর ক্ষেত্রেও। জন্মের অষ্টম দিনে গীর্জায় নিয়ে গিয়ে খৎনা করে তার নাম রাখা হয় ইয়েশুয়া বা ইংরেজিতে যিশু। আর সেদিন থেকেই খ্রিস্টাব্দের সূচনা। সেই কারণেই যিশুরু জন্মের বর্ষপূর্তিতে নতুন সাল গণনা করা হলেও, নতুন বছর শুরু হয় অষ্টম দিনে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নতুন বছর আরও খানিকটা পিছিয়ে শুরু হয়।
জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের নববর্ষ পালিত হয় বর্তমান ক্যালেন্ডারের ১৪ জানুয়ারিতে। ফলে সমস্যা দেখা যেত দিনক্ষণ নির্ধারণে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে লিপ ইয়ারের কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না।
এই সমস্যা সমাধান করতে ১৫৮২ সালে নতুন ক্যালেন্ডার শুরু করেন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। তার প্রণীত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই আজ ব্যবহার করে গোটা বিশ্ব। যদিও পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এখনও পালিত হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, তবে সেটা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে। তাই রাশিয়া, ইউক্রেনের মতো দেশগুলো বড়দিন পালন করে ৬ জানুয়ারিতে। ১৪ জানুয়ারি নতুন বছর পালন করে এই দেশগুলো।
দ্য ওয়াল অবলম্বনে