১৯৯২ সালে পরিচালক মনিরত্নমের তামিল সিনেমা ‘রোজা’ তে সংগীত পরিচালনা করে বলিউডে শোরগোল ফেলে দেন এ আর রহমান। তবে কেবল বলিউডে নয়, এই সিনেমার গান শোনা গেছে তামিল ভাষাতেও। হিন্দি ও তামিল দুই ভাষাতেই ‘রোজা’র প্রায় সব কটি গান কয়েক শ্রোতাদের মন জিতে নেয়। রাতারাতি তারকা বনে যান ২৫ বছর বয়সী ওই যুবক।
শুধু তাই নয়, জীবনের প্রথম সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য জিতে নেন জাতীয় পুরস্কার। যার জয়রথ ছুটছে আজ অবধি।
জীবনের ৫৭ বছর পার করে আসা অস্কার জয়ী এই সুরকারকে ভারতের পুরুষ সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
এই তথ্য দিয়েছে আনন্দবাজারসহ ভারতের ইংরেজি বাংলা ভাষার একাধিক সংবাদমাধ্যম। দীর্ঘ ক্যারিয়ার পাড়ি দেওয়া এর আর রহমানের সম্পদের পরিমাণ বলা হচ্ছে ২ হাজার ১০০ কোটি রুপির মত।
চেন্নাইয়ে রয়েছে রহমানের বিলাসবহুল বাড়ি। সেখানে রয়েছে একাধিক শয়নকক্ষ, খাওয়ার ও বসার ঘর। বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল বিনোদনকক্ষ। যে ঘরে গান-বাজনার আসর বসে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসেও রহমানের একটি বিলাসবহুল বাড়ির খোঁজ দিয়েছে আনন্দবাজার। সেখানে গানের বিরাট স্টুডিও তৈরি করেছেন রহমান। এ ছাড়াও মুম্বাই ও লন্ডনেও রহমানের নিজস্ব স্টুডিও রয়েছে।
শিল্পীর গাড়ির সংগ্রহও নজরকাড়া। ৯৩ দশমিক ৮৭ লাখ থেকে কয়েক কোটি রুপি পর্যন্ত দামের বেশ কয়েকটি গাড়ি সংগ্রহে রয়েছে এই শিল্পীর।
মাদ্রাজে জন্ম বলে রহমানকে ‘মাদ্রাজ মোজার্ট’ হিসেবে ডাকা হয়। আবার তামিল ভক্তদের ভাষায় তিনি ‘মিউজিকের ঝড়’।
১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি তামিলনাড়ুর এক হিন্দু পরিবারের তিনি জন্মেছিলেন। পারিবারিক নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। ১৯৮৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে দিলীপ থেকে হয়ে যান এ আর রহমান।
চার বছর বয়স থেকে পিয়ানো শেখা শুরু করেছিলেন রহমান। তার বাবাও পেশার কারণে জড়িত ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে। তাই বাবার সঙ্গে স্টুডিয়োতে সহযোগিতাও করতেন ছেলেবেলা থেকে। গানের পরিবেশেই বেড়ে ওঠা এই শিল্পী ডিপ্লোমাও করেন পশ্চিমা সঙ্গীতের উপর।
‘রোজা’ সিনেমার পর ‘দিল সে’, ‘তাল’, ‘লগান’, ‘স্বদেশ’, ‘রং দে বাসন্তী’ সহ বহু চলচ্চিত্রের গান এ আর রহমানকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
হিন্দি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষার সিনেমার সংগীত আয়োজন করেছেন এ আর রহমান । সেগুলোর মধ্যে ‘মিলিয়ন ডলার আর্ম’ এবং ‘ওয়ান হানড্রেড ফুট জার্নি’ সিনেমা বিখ্যাত হয়। যুক্ত ছিলেন ইরানি সিনেমার কাজেও।
বাংলাদেশের নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ সিনেমার গানের কাজেও জড়িত হন এই কিংবদন্তী।
অস্কার ছাড়াও বিশ্বসংগীতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘গ্র্যামি’ অ্যাওয়ার্ড রয়েছে রহমানের ঝুলিতে। এছাড়া বাফটা, গোল্ডেন গ্লোবস থেকে শুরু করে পেয়েছেন ছয়বার জাতীয় পুরস্কার।
প্রাপ্তির পাশাপাশি বিতর্কও ছুঁয়ে গেছে রহমানকে। সুর বিকৃতি থেকে নানা অভিযোগের তিরে বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি রহমানের ২৯ বছরের সংসার ভাঙার খবরের কথাও উঠে এসেছে শিরোনামে।