ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

Muhammad Yunus

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তারা চান আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে তিনি আশা করছেন।

তার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার কয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম পর্বের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো।”

তিনি বলেন, “সব সময় মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু যুদ্ধাবস্থায় আছি। ‘গুজব’ হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার। গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। বহু অভিজ্ঞ সমরবিশারদ এই গুজবের পেছনে দিনরাত কাজ করছে, সীমাহীন অর্থ এর পেছনে নিয়োজিত আছে। এর মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা। আমরা তাকে ব্যর্থ হতে দেব না।”

মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “তারা এই ঐক্য ভাঙতে চায়। তাদের অভিনব কৌশল আপনি টেরই পাবেন না। আপনি বুঝতেই পারছেন না কখন তাদের খেলায় আপনি পুতুল হয়ে গেছেন। আমাদের সচেতনতা এবং সামগ্রিক ঐক্য দিয়েই এই গুজবকে রুখতে হবে। পলাতক অপশক্তির ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্ট বলেন, “বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোরালো ব্যবস্থা নিয়েছে। রমজান ও ঈদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জিনিসপত্রের দামের লাগাম টেনে ধরা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ রমজানে যাতে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে না যায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। রমজান মাসজুড়ে সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের সব জায়গা থেকে খবর এসেছে, এই রমজানে দ্রব্যমূল্য আগের তুলনায় কমেছে; জনগণ স্বস্তি পেয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে এই প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।”

“অন্তর্বর্তী সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিয়োগের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। আশা করা হচ্ছে, দ্রুততম সময়ে দেশে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ দেখা যাবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা শুনেছেন, আমি স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের স্পেসএক্স ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছি। সে অনুসারে, কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখন বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরুর আয়োজন করছে। তাদের সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। স্টারলিংকের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে একটি বিপ্লব আনবে।”

ইউনূস বলেন, “ইতিমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ইতিবাচকভাবে সংস্কারকাজে সাড়া দিয়েছে, তাদের মতামত তুলে ধরছে। কোনো রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে—সেসব তারা জানাচ্ছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত সুখকর বিষয় যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছে।”

আরও পড়ুন