বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা, খুন এবং নির্যাতনের বিচার করবেন তিনি। সোমবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় দলীয় কর্মীদের সেই আশ্বাসই দিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আলোচনার একটি পর্যায়ে তিনি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “চিন্তা করবেন না। আসতেছি আমি।”
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের ফেসবুকে পেজে তা সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়।
সোমবার রাতেও সে রকম একটি ভার্চুয়াল আলোচনা ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই আলোচনাপর্বে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমস্যার কথা শোনেন আওয়ামী লীগের নেত্রী।
কর্মী-সমর্থকেরা দাবি করেন, তাদের পরিবারের উপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার চলেছে।
নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা জানান, তিনি এই সব ঘটনার বিচার করবেন।
নিহত নেতা-কর্মীদের পরিবার এবং আহতদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আল্লাহ’র নামে প্রতিজ্ঞা করছি, খুনিদের বিচার আমি একদিন করবই। হয়তো সেই কারণেই আল্লাহ আমাকে বারে বারে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করে বাঁচিয়ে রেখেছেন।”
আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, “খুনের মামলা কখনও তামাদি হয় না।”
কর্মী-সমর্থকদের বলেন, “হামলাবাজদের খুঁজে খুঁজে শাস্তি দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আল্লাহ্ সেই জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছেন। চিন্তা করবেন না। আসতেছি আমি।”
১ ঘণ্টা ১১ মিনিটের ওই আলোচনায় আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টানেন শেখ হাসিনা। নিজের বক্তৃতার একটি বড় অংশ জুড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করেন।
আওয়ামী লীগের নেত্রীর দাবি, “আমরা আমাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করিনি। কিন্তু ইউনূস করছে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেশটাকে যখন উন্নয়নশীল দেশে তুলে ধরলাম। তখনই এমন গভীর চক্রান্ত হয়ে গেল। বাংলাদেশকে জঙ্গিদের দেশে পরিণত করা হল। আর দিনশেষে এমন ব্যক্তি ক্ষমতা দখল করল, যার মানুষের প্রতি কোনও দয়া মায়া নেই আর ছিলও না।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে মোটা অঙ্কের সুদ নিত। সেই টাকায় উনি বিদেশে পাঠিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। আমরা ভাবতাম গরীব মানুষের ভাল করছে। তাই একসময় অনেক সহযোগিতা করেছিলাম। পরে সেই মানুষের টাকা নিয়ে তছরুপ করেছে। ওনার ক্ষমতার লোভেই আজ বাংলাদেশ জ্বলছে।”
ইউনূসকে ‘সুদখোর’ এবং ‘মানবতাবিরোধী’ বলেও সমালোচনা করেন তিনি। পুরো বক্তৃতায় বার বার আসে ‘বিচারে’র কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এই জঘন্য কাজ করেছে, তাদের বিচার বাংলাদেশে হতেই হবে। সেটি আমরা করবই। শহীদ পরিবারদের বলব, আপনারা ধৈর্য্য ধরুন।”
ভার্চুয়াল সভায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নিহত আবু সাঈদের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তার অভিযোগ, “ওরা আসলে ওই পড়ুয়ার লাশটাই চেয়েছিল। শুনেছিলাম, মাথায় আঘাত লেগেছিল। কিন্তু ওকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিতে দেয়নি। তার আগেই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি করে।”
বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান-সহ অন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দেওয়ার বার্তাও দেন শেখ হাসিনা।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের খবরও প্রকাশ্যে এসেছে।