টিউলিপ সরে গেলে, কে আসবেন তার জায়গায়

টিউলিপ সিদ্দিক
টিউলিপ সিদ্দিক

সম্পত্তির ব্যবহার নিয়ে বিপাকে পড়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে যদি শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরতেই হয়, তাহলে তার উত্তরসূরী বেছে নিতে চিন্তাভাবনা চলছে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছে গত সোমবার টিউলিপ আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রকাশ্যে আসার আগে সপ্তাহান্তে তার উত্তরসূরি হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে স্টারমার টিউলিপের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা থাকার কথা ফের উল্লেখ করেছেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্রও টিউলিপের বিকল্প প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত তালিকা দল তৈরি করেছে বলে যে তথ্য ছড়িয়েছে তা ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন।

তবে স্টারমারের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে টিউলিপের উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হচ্ছে, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে দ্য টাইমস। যদিও বিষয়টি এখনো ‘অনানুষ্ঠানিক’ পর্যায়ে রয়েছে।

শোনা যাচ্ছে, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের প্রার্থীদের মধ্যে আছেন অর্থমন্ত্রী র‌্যাচেল রিভসের দুই সহযোগী অ্যালিস্টার স্ট্রাথার্ন ও ইমোজেন ওয়াকার।

এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সংসদীয় একান্ত সচিব (পিপিএস) ক্যালাম অ্যান্ডারসন, পরিবেশ বিভাগের পিপিএস কনিষ্ক নারায়ণ, এমপি জশ সিমন্স এবং লন্ডনের এমপি র‌্যাচেল ব্লেকের নামও বিবেচনার তালিকায় রয়েছে।

শোনা যাচ্ছে অ্যাটর্নি লুসি রিগবি এবং অর্থনীতিবিদ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পিপিএস টর্স্টেন বেলের নামও।

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে গত আগস্টে দেশ ছেড়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কিছু সম্পত্তির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়া টিউলিপ মন্ত্রীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে তার বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

দ্য টাইমস জানিয়েছে, টিউলিপ ও তার পরিবারের সাত সদস্যের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিতে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করতে তিনি সহায়তা করেছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন।

লেবার পার্টির একটি সূত্র বলেছে, টিউলিপের সহায়তা চাওয়া থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি ‘সরে যাওয়ার পথে’।

দ্য টাইমস বলছে, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের এক সমর্থক টিউলিপকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন।

এরপর তার বোনের সাড়ে ছয় লাখ পাউন্ডের সম্পত্তি পাওয়ার তথ্য সামনে আসার পর চাপে পড়ে যান টিউলিপ।

তবে টিউলিপের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি তার সমর্থনের সঙ্গে এসব সম্পত্তির যোগসূত্র থাকার ধারণা ‘পরিষ্কার ভুল’।

‘কোনো অন্যায় করেননি’ এমন দাবি করে টিউলিপ নিজেও ম্যাগনাসের কাছে বলেছেন, “সন্দেহ এড়াতে আমি চাই, আপনি স্বাধীনভাবে এসব বিষয়ে সত্যটা তুলে ধরুন। আমি নিশ্চিত, আপনার কাছে প্রয়োজনীয় সব তথ্য রয়েছে।”

ওদিকে একজন বিরোধীপক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন, টিউলিপ লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী ওই আইনজীবীর পরিবারকে হুমকি দিয়েছিল। এটি নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন শেখ পরিবারের এই সদস্য।

দ্য টাইমস জানিয়েছে, ওই ঘটনা যখন ঘটে, তখন টিউলিপ ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। চ্যানেল ফোর মীর আহমেদ বিন কাসেম সম্পর্কে টিউলিপের কাছে জানতে চেয়েছিল।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেমের ছেলে আহমেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বাবার আইনজীবী দলের সদস্য ছিলেন।

মীর আহমেদ ২০১৬ সালে গুমের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৬ অগাস্ট তিনি পরিবারের কাছে ফেরেন। আহমেদের হদিস পেতে তার মা তখন টিউলিপকে চিঠি দিয়েছিলেন।

টিউলিপের ভাষ্য, তিনি সে সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন, যিনি বিষয়টি ঢাকায় হাই কমিশনে পাঠানোর কথা বলেছিলেন।

সাক্ষাৎকারের ফুটেজ প্রচারের কয়েক ঘণ্টা আগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব ঢাকায় আহমাদের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে।

টিউলিপ কী করতে পারতেন, এমন প্রশ্নে আহমেদ দ্য টাইমসকে বলেছেন, “তিনি তার পরিবারের সাথে কথা বলতে পারতেন এবং আমার অবস্থান জানতে চাইতে পারতেন; তাতে অন্তত আমার পরিবার জানতে পারত যে আমি বেঁচে আছি না মারা গেছি।”

টিউলিপের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তিনি ক্ষমতায় থাকলে তা ব্রিটেন ও ব্রিটিশ এমপিদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হবে। যুক্তরাজ্য হচ্ছে মানবাধিকার, সংগঠনের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতার প্রতীক।

“বাংলাদেশের আইনের ভিত্তি হচ্ছে ব্রিটিশ আইন। কিন্তু এই মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়ানোর ব্যর্থতা বাংলাদেশ এবং এর বাইরে যুক্তরাজ্যের অবস্থানকে নড়বড়ে করে দেয়।”

সূত্র: দ্য টাইমস

আরও পড়ুন