ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার।
ভারত সরকারের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ‘৫৫তম মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন’ বিএসএফ সদর দপ্তরে ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারানোর পর এটিই হবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। অন্যদিকে বিএসএফের প্রতিনিধিত্ব করবেন বাহিনীর মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী।
বছরে দুইবার অর্থাৎ ছয় মাস পর পর দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের এই সম্মেলন হয়ে থাকে। সর্বশেষ এই সম্মেলন হয়েছিল গত বছরের মার্চে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সম্মেলনে সময় নির্ধারিত থাকলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পূর্বনির্ধারিত সেই সম্মেলন আর হয়নি। আরও ছয় মাস পর সোমবার এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার, যা ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিস্তৃত। এর মধ্যে পশ্চিমঙ্গের সঙ্গে ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার, মিজোরামের সঙ্গে ৩১৮ ও আসামের সঙ্গে ২৬২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের।
এই সীমান্তের প্রায় ৭৯ শতাংশ অংশ কাঁটাতারে ঘিরে দিয়েছে ভারত। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পার্লামেন্টে এই তথ্য জানান দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তিনি আরও জানান, অবশিষ্ট প্রায় ৮৬৫ কিলোমিটার অংশে এখনও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা যায়নি।
এক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার কথা উল্লেখ করে নিত্যানন্দ রাই জানান, এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ, বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) আপত্তি, কাজের সময়সীমা সীমিত থাকা এবং ভূমিধস বা জলাভূমির উপস্থিতি।
আলোচনায় গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্তে বেড়া নির্মাণের পাশিপাশি বিএসএফ সদস্য ও ভারতীয় নাগরিকদের ওপর ‘বাংলাদেশি দুষ্কৃতিকারীদের হামলা’সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসবে।
বিএসএফের বিবৃতির বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনের মূল লক্ষ্য দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যু মোকাবিলা করা। আলোচনায় মূলত ‘বাংলাদেশ থেকে আসা দুষ্কৃতিকারীদের’ বিএসএফ সদস্য ও ভারতীয় নাগরিকদের ওপর হামলা প্রতিরোধ, সীমান্ত অপরাধ দমনের কৌশল, একক-সারি বেড়া নির্মাণ এবং বাংলাদেশের ভেতরে সক্রিয় ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এ ছাড়া উভয় পক্ষ সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার অধীনে যৌথ উদ্যোগ, এবং আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে আলোচনা করবে।
এর বাইরে ভারতীয় প্রতিনিধিদল আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্মেলনে তাদের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে করা কিছু ‘অসম চুক্তি’ পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ দেওয়া হবে।