মুম্বাই হামলার হোতার সহযোগী রানাকে পেল ভারত, কী বলছে পাকিস্তান

বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে বিমান থেকে নামামাত্র গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে বিমান থেকে নামামাত্র গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

মুম্বাইয়ে যে সন্ত্রাসী হামলায় নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ভারতকে, যে হামলায় ১৬৬ জনের প্রাণহানি হয়েছিল, সেই হামলার ‘নাটেরগুরু’র সহযোগী হিসাবে পরিচিত তাহাউর রানাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে এনেছে ভারত।

বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে দিল্লিতে অবতরণের পর পরই বিমান থেকে নামিয়ে রানাকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

রানাকে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, হত্যা ও জালিয়াতি এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

পেশায় চিকিৎসক এই পাকিস্তানি নাগরিককে নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছে না ইসলামাবাদ। বরং এখন দেশটি তাকে পাকিস্তানি হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই নারাজ।   

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খানকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা কানাডায় যাওয়ার পর তার নাগরিকত্ব নবায়নের কোনো চেষ্টা করেনি। আর পাকিস্তান কানাডায় অভিবাসন নেওয়া পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না। তাই ‘স্পষ্টত’ রানা এখন কানাডার নাগরিক।

ইসলামাবাদে শাফকাত আলী বলেন,“দুই দশকেরও বেশি সময় তাহাউর রানা তার পাকিস্তানি নথিপত্র নবায়ন করেননি। তাই সে কানাডার নাগরিক এটা একদম পরিষ্কার।”

কে এই তাহাউর রানা

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সঙ্গে রানার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে নানা সময় খবরে উঠে এসেছে। সেইসঙ্গে মুম্বাইয়ে হামলা চালানো নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তাইয়্যেবার সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে।

ভারত বরাবরই বলে আসছিল ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ওই হামলাগুলো পাকিস্তান ভিত্তিক চক্রের সহযোগিতায় হয়েছিল।

রানা ভারতের মাটিতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লির তিহার জেলের উচ্চ নিরাপত্তা সেলে নিয়ে গেছে।

এখন নিয়ম অনুযায়ী তাকে দিল্লির আদালতে হাজির করা হবে; সেখান থেকে মুম্বাই নেওয়া হবে। মুম্বাইয়ে রানাকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এরপর তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে হতাহতের পরিবারগুলো।

রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ

রানার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, হত্যা ও জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশ্বাস আরেক সন্ত্রাসী পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে মুম্বাই হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি হেডলি স্বীকারোক্তিতে দাবি করেছেন, রানা তাকে লজিস্টিক এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন।

রানার প্রত্যার্পণ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রানার প্রত্যার্পণ মুম্বাই হামলার বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, আর যা হয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায়। তবে কংগ্রেসের দাবি, ২০০৯ সালে তাদের শাসনামলে রানাকে ফেরত আনার প্রচেষ্টা শুরু হয়।

২০০৯ সালের অক্টোবরে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে হামলার পরিকল্পনা ও মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী লস্কর-ই-তাইয়্যেবাকে সহযোগিতার অভিযোগে এফবিআই রানাকে গ্রেপ্তার করে। দুই বছর পর তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

এরপর ভারতের কাছে প্রত্যার্পণের বিরুদ্ধে আপিল করলেও তা মঞ্জুর হয়নি।

মুম্বাইয়ে তিন দিনব্যাপী ওই হামলায় একটি পাঁচতারা হোটেল, রেলস্টেশন এবং একটি ইহুদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করা হয়। ১০ হামলাকারীর মধ্যে শুধু আজমল কাসাব নামে একজনকে জীবিত আটক করা হয়েছিল সেসময়। ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর কাসাবকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads